Dhapa

ন’বছরে আড়াই লক্ষ টন গ্যাস! ধাপা-দূষণে কমিটি

যদিও কলকাতা পুরসভার দাবি, বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে তিন মাসে ধাপায় প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র

ধাপায় দীর্ঘদিন ধরে জঞ্জাল জমে পরিবেশগত কী ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এ বার কমিটি তৈরির নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। অনেক বছর আগেই ধাপা তার সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে বলে সতর্ক করেছিলেন পরিবেশবিদেরা।

Advertisement

কলকাতা পুরসভা ও ব্রিটিশ হাই কমিশনের যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৩-২০২২ সাল, এই ন’বছরে ধাপা থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন হওয়ার কথা। এতেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা দূষিত ধাপা ও তার সংলগ্ন এলাকা। কিন্তু বিকল্প ভাগাড়ের সন্ধান না মেলায় শহরের যাবতীয় বর্জ্য এখনও সেখানেই ফেলা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে পরিবেশগত ক্ষতি দেখতে কমিটি গঠনের নির্দেশকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কমিটি তৈরির পরেও ধাপা-সমস্যার সমাধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, ধাপা নিয়ে আগেও একাধিক বার কথা হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। সেখানে দীর্ঘদিন জমে থাকা স্তূপীকৃত জঞ্জালের (লেগ্যাসি ওয়েস্ট) পাশাপাশি প্রতিদিনের বর্জ্যও জমা হচ্ছে, যা চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক। এ জন্য বায়োরেমিডিয়েশন (যে প্রক্রিয়ায় সজীব বস্তু অর্থাৎ লিভিং অর্গানিজম ব্যবহার করে মাটি, জল বা কোনও এলাকার দূষণ কমানো হয়) পদ্ধতির কাজ যাতে দ্রুত করা হয়, তার তদারকি করবে আদালত নির্দেশিত কমিটি। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (নিরি) প্রতিনিধিরা থাকবেন ওই কমিটিতে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নোডাল সংস্থা করা হয়েছে। ক্ষতি নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকা সংস্কারে কী করণীয়, তা-ও কমিটিই নির্ধারণ করবে। দু’মাস সময়সীমার মধ্যে ওই কাজ করতে হবে বলে আদালত জানিয়েছে।

Advertisement

একই সঙ্গে ধাপায় যে সংখ্যক কঠিন বর্জ্য পৃথকীকরণের যন্ত্র (ট্রমেল) ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে আদালত। কারণ, নিজেদের হলফনামায় রাজ্য জানিয়েছে, বর্তমানে ধাপায় ৩০০ টিপিডি (টন পার ডে) ক্ষমতাবিশিষ্ট একটি ট্রমেল ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও দু’টি সমক্ষমতার ট্রমেল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ দিকে প্রতিদিন ধাপায় যত পরিমাণ বর্জ্য পড়ে (দৈনিক প্রায় সাড়ে চার হাজার টন), তার তুলনায় এই সংখ্যক ট্রমেল মোটেও পর্যাপ্ত (‘গ্রসলি ইনঅ্যাডিকোয়েট’) নয় বলে জানিয়েছে আদালত। ফলে রাজ্যকে ওখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রমেলের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, নিয়ম মতো দৈনিক যত বর্জ্য ভাগাড়ে পড়ে, তার থেকে বেশি পরিমাণ বর্জ্যের বায়োরেমিডিয়েশন করা প্রয়োজন। যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে পারে বলে জানাচ্ছে আদালত।

যদিও কলকাতা পুরসভার দাবি, বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে তিন মাসে ধাপায় প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ হয়েছে। স্বল্পকালীন পরিকল্পনার ভিত্তিতেই এই কাজ হয়েছে। দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভাগাড়ের প্রায় ৪০ লক্ষ টন বর্জ্য বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণের কথা চলছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ধাপা সমস্যার কী ভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আমরাও ক্রমাগত ভাবছি। যে কারণে অন্যত্র ভাগাড়ের বিকল্প জমিও দেখা হয়েছে। কিন্তু শহরের প্রতিদিনের বর্জ্য তো জমিয়ে রাখা যায় না। সেটা রোজই ফেলতে হয়। তাই হয়তো একটু দেরি হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement