হাসপাতালে প্রীতম। নিজস্ব চিত্র
খাদ্যনালির শেষপ্রান্তে রয়েছে একটি পাঁচ ইঞ্চির টিউমার। অথচ সেটি বার করতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে না। এমনটাই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
সে কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার ‘এন্ডোস্কোপিক সাবমিউকোসাল ডিসেকশন’ (ইএসডি) পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার ছাড়া সেই টিউমার বার করলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
তারকেশ্বরের বালিগুড়ির বাসিন্দা বছর সাতাশের প্রীতম সাউর খাবার খেতে অসুবিধা হচ্ছিল। হজমের সমস্যার পাশাপাশি বুক জ্বালা করত রোগীর। চিকিৎসার জন্য প্রীতমকে নিয়ে তাঁর পরিবার এনআরএসের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছিল। রোগীর পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, তাঁর খাদ্যনালির শেষে বড় একটি টিউমার রয়েছে। এ দিন প্রীতমের দাদা অমিত সাউ বলেন, ‘‘টিউমার অস্ত্রোপচার করতে হয় শুনেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচার ছাড়াই সেটি বার করা হবে শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। এখন ভাইকে সুস্থ দেখে আশ্বস্ত লাগছে।’’ বৃহস্পতিবার দেড় ঘণ্টার বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসক মানস মণ্ডল এবং তাঁর সহযোগীরা ওই টিউমারটি বার করেন।
এ দিন মানসবাবু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাধারণত এ ধরনের টিউমার বার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এন্ডোস্কোপিক সাবমিউকোসাল ডিসেকশন পদ্ধতির সাহায্যে চিকিৎসা করলে অস্ত্রোপচার করার কোনও প্রয়োজন হয় না। এত বড় টিউমার ইএসডি পদ্ধতিতে বার করলাম এই প্রথম। সেটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল।’’
চিকিৎসক জানান, খাদ্যনালির শেষ প্রান্তে যতটা অংশ জুড়ে টিউমার রয়েছে, আগে তা চিহ্নিত করা হয়। এর পরে টিউমারটিকে উপরের দিকে তোলার জন্য সলিউশন দেওয়া হয়। ইএসডি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে টিউমারকে ছ’টি খণ্ডে কাটা হয়। এক ধরনের জালির সাহায্যে তা ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে বার করা হয়।
সূত্রের খবর, এই চিকিৎসার প্রয়োজনীয় দু’টি যন্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিল। তার সাহায্যেই প্রীতমের চিকিৎসা হয়েছে। ওই দু’টি যন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মানসবাবুর কথায়, ‘‘যন্ত্র দু’টি পেলে এই পদ্ধতিতে আরও চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।’’