‘আগে রজনীর গন্ধে বাজার ম ম করত, এখন তা কোথায়!’

তবে ‘গন্ধ-বিচারে’ আচমকাই রজনীগন্ধা ফুলের সুবাস কমেছে, তা মানতে নারাজ চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ফুলে গন্ধ নেই।

Advertisement

রজনীগন্ধার ক্ষেত্রে এটাই এখন সারসত্য বলে জানাচ্ছেন চাষি থেকে বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা মানছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া রজনীগন্ধা ফুলে এখন আর সেই সুবাস নেই।

তবে ‘গন্ধ-বিচারে’ আচমকাই রজনীগন্ধা ফুলের সুবাস কমেছে, তা মানতে নারাজ চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, শেষ কয়েক বছর ধরে ক্রমশ রজনীগন্ধার গন্ধে ভাটা পড়েছে। আর এ বছরে ফুলে গন্ধ প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও বাজারে দেদার বিকোচ্ছে লম্বা ডাঁটিযুক্ত ওই ফুল। বিক্রেতাদের কথায়, ‘‘গন্ধ যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে কয়েক গুণ কম। আগে রজনীর গন্ধে বাজার ম ম করত। এখন শুঁকে দেখতে হয়।’’

Advertisement

এর কারণ কী? চাষিরা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগেও জৈব সার ব্যবহার করে রজনীগন্ধার চাষ করা হত। কিন্তু এখন রাসায়নিক সার ব্যবহার করাতেই বেড়েছে সমস্যা। তা হলে কেন রাসায়নিক সারের ব্যবহার? চাষিদের ব্যাখ্যা, কোনও জমিতে চাষ শুরুর সময়ে মাটির উর্বরতা বেশি থাকে। কিন্তু বারবার চাষ করতে থাকলে এক সময় জমির উর্বরাশক্তি কমতে শুরু করে। তখন ফলন বাড়াতে বাধ্য হয়ে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ করতে হয়। তাতে রজনীগন্ধা ফুটছে ঠিকই, কিন্তু কমছে তার গন্ধ। ফুল তাজা থাকার সময়ও কমছে সেই সঙ্গে।

সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদন বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু প্রাকৃতিক গুণ একেবারে কমে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও নদিয়ায় বহু বছর ধরেই রজনীগন্ধা চাষ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরেও চাষ শুরু হয়েছে পাঁচ বছর আগে থেকে। ‘রানাঘাটের রজনী’ ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না, লালচে হয়ে যায়। সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের রজনীগন্ধা তাজা থাকে প্রায় ৪-৫ দিন। তবে সারা বছরই এই ফুলের চাহিদা থাকে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক ফুল চাষির কথায়, ‘‘বর্ষায় ফলন ভাল হয় না। বাধ্য হয়ে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়।’’

উদ্যান বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্ষায় যেহেতু অনেক সময়ে জমি ভেসে যাচ্ছে, তাই কম সময়ে চটজলদি ফলন পেতে চাইছেন চাষিরা। জৈব সার ব্যবহারে যেখানে ফুল ফুটতে এক বছর সময় লাগে, সেখানে রাসায়নিক সারে সময় লাগে ৭-৮ মাস। কিন্তু মার খায় ফুলের গুণগত মান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সমিত রায় বলেন, ‘‘যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ফুলের গন্ধ তৈরি হবে, সেখানেই ঘাটতি হচ্ছে।’’ গন্ধে ঘাটতির জন্য রাসায়নিক সারকে দায়ী করছেন রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া। তাঁর যুক্তি, ‘‘জৈব সারে চাষ করলে সুবাস ঠিক হয়। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় সুবাস তৈরির জন্য ফুলের নিজস্ব বিক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই গন্ধ থাকছে না অথবা কম হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement