নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা, মৃত লরিচালক

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে কাচের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৭
Share:

দুমড়েমুচড়ে: দুর্ঘটনাগ্রস্ত লরিটি। বৃহস্পতিবার, কমিসরিয়েট রোডে। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী

রাতের ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলেছে লরি। আচমকাই ডান দিক থেকে সামনে চলে এল ছোট একটি গাড়ি। লরির ধাক্কায় দূরে ছিটকে যায় গাড়িটি। চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে সোজা বাঁ দিকের ফুটপাতে তুলে দেন লরি। দু’টি দোকান ও একটি বটগাছে ধাক্কা মারে সেটি। পুলিশ জানিয়েছে, ধাক্কার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, গাছটির একটি মোটা ডাল ঢুকে যায় লরির চালকের কেবিনে। পরে পুলিশ গিয়ে লরিচালককে তাঁর কেবিন থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হেস্টিংস থানা এলাকার ক্লাইড রোড ও কমিসরিয়েট রোডের সংযোগস্থলে। মৃতের নাম রাকেশ কুমার (২০)। তাঁর বাড়ি বিহারের ভাগলপুরের গোরাডি থানা এলাকার বারারি গ্রামে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, লরির ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া গাছের ডাল সজোরে রাকেশের বুকে লাগে। তাঁর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। রাতেই রাকেশের কাছে থাকা মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে খবর দেয় হেস্টিংস থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, ছোট গাড়িটি অ্যাপ-ক্যাব হিসেবে চলে। ওই গাড়ির চালকের অবশ্য কিছু হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে কাচের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। লরির ধাক্কায় একটি ফল ও একটি ঝালমুড়ির দোকান পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। ফল ব্যবসায়ী বিরজু যাদবের কথায়, ‘‘আমি তখন ফুটপাতে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙতেই দেখি, বিশাল লরি আমার খাটের সামনে। কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছি।’’ বিরজু জানান, দুর্ঘটনার মিনিট পনেরো আগেই ঘটনাস্থলে বসে কয়েক জন মিলে গল্প করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা সরে না গেলে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আরও বাড়ত।’’

Advertisement

সপ্তাহ তিনেক আগেই শেক্সপিয়র সরণি থানার সামনে বেপরোয়া গতিতে চলা একটি জাগুয়ার ধাক্কা মারে একটি মার্সিডিজে। জাগুয়ারটি মার্সিডিজে ধাক্কা মারার পরে সেটি ফুটপাতে থাকা দুই বাংলাদেশি নাগরিককে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। ওই ঘটনায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে শহরের এক নামী রেস্তরাঁ চেনের মালিকের ছেলে রাঘিব পারভেজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বেপরোয়া গতি আটকাতে মাস দু’য়েকেরও বেশি সময় ধরে রাতের শহরের বিভিন্ন জায়গায় নাকা তল্লাশি শুরু করেছেন পুলিশকর্মীরা। তা সত্ত্বেও যে শহরের রাস্তায় বেপরোয়া গতি আটাকানো যাচ্ছে না, বুধবারের ঘটনাই তার প্রমাণ বলে পুলিশের একাংশের দাবি।

ওই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, স্ট্র্যান্ড রোড থেকে কমিসরিয়েট রোড ধরে ক্লাইড রোডের দিকে যাচ্ছিল অ্যাপ-ক্যাবটি। আর ক্লাইড রোড ধরে হেস্টিস মোড় থেকে দইঘাটের দিকে যাচ্ছিল লরিটি। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, লরিটি খুব জোরে যাচ্ছিল। অ্যাপ-ক্যাবটি দুই রাস্তার সংযোগস্থলে পৌঁছলে লরিটি তাঁকে ধাক্কা মারে। তার পরেই সোজা বাঁ দিকের ফুটপাতে উঠে যায়।

এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, গাড়ির গতি এত বেশি ছিল যে, গাছে ধাক্কা মারার পরেই গাছের একটি অংশ সোজা ঢুকে যায় চালকের কেবিনে। তাতেই মারাত্মক জখম হন রাকেশ। যা তাঁর মৃত্যু ডেকে আনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement