Coronavirus Lockdown

সারা রাত ঘুম নেই, সকাল হলেই জলের লাইনে

বৈষ্ণবঘাটা, গড়িয়া, পদ্মশ্রী মোড়-সহ শহরের বেশ কিছু এলাকায় পাঁচ দিন পরেও আসেনি আলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০২:১০
Share:

ঝড়ের পাঁচ দিন পরেও ফেরেনি আলো। কানুনগো পার্কের বাড়িতে বসে নিজেদের দুর্দশার কথা বলছেন সুব্রত ও ভারতী দত্ত।ছবি: সুমন বল্লভ

গরমে টানা পাঁচ রাত ঘুমোতে পারেননি ওঁরা। ছ’নম্বর রাত নামছে। ঝড়ের পরে বাড়িতে আলো জ্বলেনি এখনও। ঘুমোতে না-পেরে জানলার ধারে বা বারান্দায় একটু হাওয়ার আশায় বসে থেকেছেন ওঁরা। সারা রাত।

Advertisement

বৈষ্ণবঘাটা, গড়িয়া, পদ্মশ্রী মোড়-সহ শহরের বেশ কিছু এলাকায় পাঁচ দিন পরেও আসেনি আলো। যার জেরে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকেই। রাতের পর রাত শুধু জেগে কাটানোই নয়, দিনের আলো ফোটার পরেই আবার জলের জন্য লাইন দিতে হচ্ছে পাড়ার নলকূপের সামনে। দু’হাতে বালতি নিয়ে প্রবীণদের কাউকে দোতলায়, কাউকে বা চারতলায় উঠতে হচ্ছে রোজ।

ওই এলাকার আশাপূর্ণা দেবী কানুনগো পার্ক ব্লক এ-র একটি আবাসনে বাসিন্দাদের অধিকাংশই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। প্রবুদ্ধ রাহা নামে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আমাদের আবাসনে প্রায় সকলেই অবসরপ্রাপ্ত, বয়স্ক মানুষ। তাঁদের ছেলেমেয়েরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। এই অবস্থায় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যে যোগাযোগ করবেন, সেই উপায়ও নেই। কারণ, ল্যান্ডলাইন বিকল। আর মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

বিদ্যুৎ না ফেরায় সমস্যায় বৈষ্ণবঘাটার অসুস্থ নকুলচন্দ্র দাসও। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ওই আবাসনের বাসিন্দা, ৮১ বছরের বৃদ্ধ সুব্রত দত্তের স্ত্রী ভারতী দত্ত বললেন, ‘‘অসুস্থতার মধ্যেও আমার অশীতিপর স্বামী দু’হাতে করে বালতি বালতি জল তিনতলা পর্যন্ত তুলছেন।’’ আর এক বাসিন্দা সুচিত্রা চৌধুরী জানান, তাঁর দুই মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। এই অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না।

বৈষ্ণবঘাটা মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে একটি বহুতলে গিয়ে দেখা গেল, পুরো বাড়িটাই ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। ওই আবাসনে আলো না-থাকায় লিফটও চলছে না। অভিজিৎ সরকার নামে এক প্রবীণ আবাসিক বললেন, ‘‘এই বয়সে নানা অসুস্থতা নিয়েও পাড়ার মোড়ে গিয়ে যুবকদের সঙ্গে অবরোধে বসেছি। যদি কোনও সুরাহা হয়, এই আশায়। আমার স্ত্রীর হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। এই গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’

ওই আবাসনের কাছেই ৮১ বছরের বৃদ্ধ বাবা নকুলচন্দ্র দাসকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ছেলে নির্মল দাস। নির্মলবাবু জানান, তাঁর বাবার স্নায়ুর সমস্যা। তাঁর বেশ কিছু ওষুধ ফ্রিজে রাখতে হয়। আলো না-থাকায় ফ্রিজও বন্ধ। তাঁর আশঙ্কা, দামি ওষুধগুলো নষ্ট হয়ে যাবে না তো?

সন্ধ্যা নামছিল তখন। বৈষ্ণবঘাটার পুতুল পার্ক এলাকা ফের ডুবে যাচ্ছিল অন্ধকারে। ওই এলাকায় আলো নেই পাঁচ দিন। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল, ফ্ল্যাটের বারান্দায়, আবাসনের গেটে অসহায় মুখে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বসে রয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। রাস্তায় কাউকে হেঁটে আসতে দেখলেই তাঁরা প্রশ্ন করছেন, সিইএসসি কর্মীদের কাউকে দেখা গিয়েছে কি না। তেমন কাউকে দেখা যায়নি শুনে এক জন বললেন, ‘‘ওঁরা কি আসবেন না আমাদের এলাকায়? আবার কবে আলো জ্বলবে?’’

রাস্তায় দেখা হল স্বপ্না হালদার নামে এক প্রবীণার সঙ্গে। তিনি নিজের পায়ের পাতা দেখিয়ে বললেন, ‘‘পাড়ার টিউবওয়েল থেকে বালতি ভর্তি জল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের পাতা ফুলে গিয়েছে। তবু আলো এল না এখনও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement