রূপার নামেই দায়ের খুনের চেষ্টার মামলা

আলিপুরের ঘটনায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করল তৃণমূল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতেই রূপার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে আলিপুর থানা। এলাকার এক তৃণমূল নেতা রূপার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে হামলার ঘটনা জানিয়ে আলিপুর থানাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা-সহ শাসক দলের অন্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী পারমিতা দত্ত। তাতে শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগও জানানো হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেও একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

প্রচারে বিজেপি নেত্রী। বুধবার দক্ষিণ কলকাতায় বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

আলিপুরের ঘটনায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করল তৃণমূল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতেই রূপার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে আলিপুর থানা।

Advertisement

এলাকার এক তৃণমূল নেতা রূপার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে হামলার ঘটনা জানিয়ে আলিপুর থানাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা-সহ শাসক দলের অন্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী পারমিতা দত্ত। তাতে শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগও জানানো হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেও একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রতাপের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে তারা। এই দুই মামলাও জামিন-অযোগ্য ধারায়।

রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই প্রতাপের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আলিপুর থানায় ঢুকে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সে যাত্রা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলাই করা হয়নি। এ বার মামলা দায়ের হলেও এ দিন গ্রেফতার করা হয়নি প্রতাপকে। উল্টে, প্রতাপের পাশাপাশি রূপার বিরুদ্ধেও খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করে দু’জনকেই কার্যত এক সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

ইতিমধ্যে মঙ্গলবারের ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রের খবর, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা-ও কলকাতা পুলি‌শ কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।

প্রচারসভা করতে গিয়ে নিগৃহীত হওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করা নিয়ে কী বলেছেন রূপা?

এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি কখন ওঁদের খুনের চেষ্টা করলাম জানি না! ওঁরাই জোর করে আমাদের মঞ্চে পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের মঞ্চে অন্য দলের পতাকা থাকবে কেন? তাই আমি তা খুলতে গিয়েছিলাম। তার পর কী হয়েছে তা তো সবাই দেখেছেন!’’ ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী পারমিতা দত্তও বলেন, ‘‘আমাকে এবং রূপাদিকে মারা হল। পুলিশ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। প্রতাপ সাহা ও তাঁর দলবলকে যত ক্ষণ না জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ কিছু বলার নেই।’’

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে গোপালনগরের মোড়ে রূপাকে হেনস্থা ও বিজেপির মঞ্চে তাণ্ডব চালানোর সময় এক পুলিশকর্মী সেখানে দাঁড়িয়ে ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন। তাঁকে বাধা দেয় প্রতাপের লোকজন। প্রতাপ নিজে এই হামলার নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করে পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারায় সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতাপের প্রতিক্রিয়া জানতে বুধবার দিনভর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

গত বছর ১৪ নভেম্বর এই প্রতাপ ও তাঁর দলবলের দাপটেই টেবিলের তলায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল আলিপুর থানার পুলিশকে। সে দিন বি সি রায় কলোনিতে সরকারি প্রকল্পের জমি মাপজোক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের বিবাদ শুরু হয়। তার পরই প্রতাপরা আলিপুর থানায় ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। আক্রান্ত এক পুলিশকর্মী টেবিলের নীচে ঢুকে ফাইল দিয়ে মাথা আড়াল করার চেষ্টা করছেন— খবরের কাগজে এমন ছবি প্রকাশের পরে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, নিরাপত্তা রক্ষার ভার যাঁদের হাতে, তাঁদেরই যদি এই হাল হয়, তা হলে রাজ্যবাসীর অবস্থা কী? কিন্তু এর পরেও তৃণমূল নেতাদের হাতে পুলিশের নিগ্রহ বা থানায় হামলার ঘটনায় লাগাম পড়েনি। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরেও তাঁদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

তবে মঙ্গলবারের ঘটনা রূপাকে যে আরও উজ্জীবিত করেছে, এ দিন তার প্রমাণ মিলেছে। অপমানের জবাব দিতে পর দিনই মোটরবাইক এবং হুড খোলা গাড়িতে চড়ে প্রায় দু’ঘণ্টা দক্ষিণ কলকাতার রাস্তায় প্রচার করলেন তিনি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ হাজির থাকলেও নজর কাড়লেন রূপাই। তাঁর দেখানো পথেই এগোল গাড়ির মিছিল।

বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে রোড শো-এর সিদ্ধান্ত অবশ্য নেওয়া হয়েছিল দিন কয়েক আগেই। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ কর্মসূচিই মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। এবং পুরো কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন রূপা। গোটা পথে তিনি বেশ কয়েক বার এক গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে ওঠেন। বেশ কিছু ক্ষণ ঘোরেন এক বিজেপি কর্মীর মোটরবাইকে। এক্সাইড মোড়ে তাঁরই নির্দেশে সামান্য বিরতি হয় মিছিলে। গোটা পর্বে রূপার শরীরী ভাষা ছিল নজর কাড়ার মতো।

তবে এই পুরভোটে তাঁদের ফল যে চোখ ধাঁধানো হবে না, সেটা এ দিন মেনে নিয়েছেন বাবুল। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাস চলছে। বিজেপি ভাল ফল করবে না। কিন্তু হারলেও যে হৃদয় জয় করে, তাকেই বাজিগর বলে। আমরা মানুষের বিপুল ভালবাসা পাচ্ছি। ২০১৬-ই আমাদের আসল লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement