মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কম নয়। ফাইল ছবি
করোনার আগের কয়েকটা বছরে রাজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল ডেঙ্গি। ২০১৮-’১৯ সালের সেই পরিস্থিতি ফিরে আসছে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছেবিভিন্ন মহলে। ডেঙ্গি আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরও।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চলতি মরসুমে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যাঁদের বেশির ভাগই ডেঙ্গি বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। দেরিতে চিকিৎসা শুরু করিয়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন অনেকেই। ফলে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কম নয়। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “যত জ্বরের রোগী আসছেন, তাঁদের একটা অংশ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তীব্র জ্বর এবং গা-হাত-পায়ে অসহ্য যন্ত্রণার লক্ষণ থাকছে। সব এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে, এমনটা নয়। এখনও ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে নির্দিষ্ট অঞ্চলে। দেরিতে পরীক্ষার ফলে রোগ ধরা পড়তে সময় লাগায় রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে।”
শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা বলেন, “আইসিইউ-তে করোনা রোগী এক জন। বরং ডেঙ্গি ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত বেশি। যকৃতের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্ত পাতলা হয়ে যাচ্ছে। রক্ত বমি, কালো পায়খানা হচ্ছে। প্লেটলেট দ্রুত নামছে।” শিশুরাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, “জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা শিশু রোগীদের কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত পেয়েছি। শিশুদেরও তীব্র জ্বর থাকছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত ৫ হাজার ৮১ জন। উদ্বেগের জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে কলকাতা (৪৩৮ জন), হাওড়া (৭৮৬), হুগলি (৩৬৮), জলপাইগুড়ি (৯৩৭) এবং আরও কয়েকটি জেলা। অন্য দিকে, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, গত এক মাসে যে সমস্ত পুরসভায় ১০ জন বা তার বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, সেই পুরসভাগুলিকে ডেঙ্গিপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তালিকায় প্রথমেই রয়েছে কলকাতা পুরসভা। তার পরেই যথাক্রমে বালি, হাওড়া ও বিধাননগর পুরসভা। রয়েছে কামারহাটি, পানিহাটি, খড়দহ, দক্ষিণ দমদম,উত্তর দমদম, উত্তরপাড়া-কোতরং, রিষড়া, শ্রীরামপুর, আসানসোল, শিলিগুড়ি পুরসভা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ১০ জন পতঙ্গবিদ বিভিন্ন পুর এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা করছেন। তাতেই উঠে আসছে সেখানকার কী অবস্থা। কলকাতা বাদে রাজ্যের ২৩টি পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার পর্যালোচনা বৈঠক করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ছিল স্বাস্থ্য দফতরও।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব জলি চৌধুরী জানান, সেপ্টেম্বরে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ দুইয়ের বদলে চার রাউন্ড করতে বলা হয়েছে সবপুরসভাকে। ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মসূচিতেও জোর দিতে হবে। হাওড়া, বালির মতো বিধাননগরেও ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। আগামী তিন মাস ওই তিন পুরসভায় জঞ্জাল অপসারণের বিশেষ অভিযান চলবে। জলি বলেন, “ডেঙ্গির সচেতনতার প্রচারে অর্থ বরাদ্দ-সহ বিভিন্ন ভাবে পুরসভাগুলিকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।”
রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরও। ব্লক, মহকুমা, জেলার প্রতিটি স্তরের হাসপাতালে ডেঙ্গি চিকিৎসার জন্য আলাদা প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা এ-ও জানান, করোনার মতো ডেঙ্গির নেপথ্যেও কিছু মানুষের তীব্র অসচেতনতা রয়েছে।