পড়ুয়াদের নিরাপত্তার প্রশ্নেও গাড়ির অবস্থান-নির্ণায়ক যন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতীকী ছবি।
মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষার পাশাপাশি স্কুলে যাতায়াতের পথে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার প্রশ্নেও গাড়ির অবস্থান-নির্ণায়ক যন্ত্রের (ভেহিক্ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস বা ভিএলটিডি) ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি নির্দেশ মেনে রাজ্যে ২০২০ সালের আগে নির্মিত ১ লক্ষ ৬০ হাজার বেসরকারি বাণিজ্যিক যানে ওই যন্ত্র বসাতে হবে। যার মধ্যে কয়েক হাজার স্কুলগাড়ি রয়েছে। কিন্তু সমস্ত স্কুলগাড়িকে নতুন এই ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
সংশয় মূলত দু’টি ক্ষেত্রে। প্রথমত, কলকাতার বিভিন্ন নামী স্কুলের গাড়িতে কয়েক বছর আগে থেকেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলগাড়ির প্রতি মুহূর্তের অবস্থান দেখতে পান অভিভাবকেরা। বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়ে চলা, হলুদ নম্বর প্লেটের ওই সব গাড়িকে নির্দিষ্ট মেয়াদে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে পরিবহণ দফতর থেকে শংসাপত্র নিতে হয়। স্কুলগাড়ি সংগঠনের নেতৃত্বের বক্তব্য, এই গাড়িগুলিতে নতুন করে ভিএলটিডি বসাতে হলে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ। দ্বিতীয়ত, সাদা নম্বর প্লেট সংবলিত যে সব ব্যক্তিগত গাড়িকে কলকাতা এবং শহরতলিতে স্কুলগাড়ি হিসেবে চালানো হয় বলে অভিযোগ, সেগুলির ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না। ফলে যাতায়াতের পথে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা হলে কিংবা ওই সব গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে তার দায় কে নেবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
স্কুলগাড়ি মালিকদের সংগঠন ‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘ভিএলটিডি-তে যে সুবিধা মিলবে, আমাদের সংগঠনের গাড়িতে বসানো যন্ত্রে তার বেশির ভাগ থাকা সত্ত্বেও বিপুল টাকা খরচ করে নতুন যন্ত্র বসাতে হবে। তাই যন্ত্রের দাম কমানো ও বাড়তি সময়ের আবেদন জানাচ্ছি।’’
একই সঙ্গে সুদীপের প্রশ্ন, সাদা নম্বর প্লেট সংবলিত যে সব ব্যক্তিগত গাড়িকে স্কুলগাড়ি হিসাবে চালানো হয়, তাদের কী ভাবে এই ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে? কারণ, এই সব গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে জরুরি মেরামতিটুকুও করা হয় না বলে অভিযোগ। নিছক রং করে, তাপ্পি দেওয়া চাকা ব্যবহার করে পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করে তারা। সুদীপের কথায়, ‘‘বেআইনি স্কুলগাড়ি চিহ্নিত করার প্রশ্নে পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরকে তৎপর হতে হবে। এ নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদেরও।’’
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়েছেন, এই যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তালিকার বাইরে আরও সংস্থার জন্য দরজা খোলা রেখেছে। দু’মাসের মধ্যেই ১২টি সংস্থাকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেই সংখ্যা বাড়বে। তাঁর দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।