পুরনো গাড়ি বাতিল এবং নতুন গাড়ি নথিভুক্তরণ আরও কঠোর করল পরিবহণ দফতর। প্রতীকী ছবি।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে পুরনো গাড়ি বাতিল এবং নতুন গাড়ি নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আগের বিধি পরিমার্জন করে আরও কঠোর করার কথা জানাল পরিবহণ দফতর।
পুরনো বিধি অনুযায়ী ছাড় পাওয়া গাড়ির তুলনায় এক ধাপ উন্নত গাড়িকে সব ক্ষেত্রেই সেই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই নির্দেশিকার ফলে রাজ্যের সর্বত্রই ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেই সঙ্গে ‘ভারত স্টেজ-৪’ মাত্রার থেকেও পুরনো গাড়ি হাতবদল হয়ে ছোটার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে, রাজ্যের বেসরকারি বাণিজ্যিক পুরনো গাড়ি বদল করার চাপও বাড়বে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের উপরে।
বুধবার রাজ্যের পরিবহণসচিব সৌমিত্র মোহনের স্বাক্ষরিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বৃহত্তর কলকাতার ক্ষেত্রে বি এস-৬ মাত্রার নীচে থাকা কোনও গাড়ির নতুন রেজিস্ট্রেশন করা হবে না। ফলে, নতুন পারমিট পেতে হলে বি এস-৬ মাত্রার গাড়ি ছাড়া সেটা দেওয়া হবে না। আগের মতোই এসপ্লানেড, হাওড়া সেতু, ব্যান্ড স্ট্যান্ডের মতো শহরের ব্যস্ত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, এমন নতুন বাস রুটের পারমিট দেওয়া হবে না। আন্তঃরাজ্য বাস রুটের ক্ষেত্রে যেগুলি বাইরে থেকে কলকাতায় আসবে, তাদের নতুন পারমিটের জন্য ন্যূনতম বি এস-৪ মাত্রার গাড়ি হতে হবে।
বৃহত্তর কলকাতার ক্ষেত্রে এখনও বি এস-৪ মাত্রার গাড়িকে ছাড় দেওয়া হয়। কলকাতায় পুরনো পারমিটের গাড়ি বদল করতে হলেও সেটি বি এস-৬ মাত্রার গাড়ি হতে হবে। তবে রাজ্যের অন্যত্র ওই নিয়ম আগের বি এস-৩ থেকে বি এস-৪ করা হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে আগের মতোই পারমিট বিধিতে ছাড় থাকছে। কলকাতার মধ্যে বি এস-৪ মাত্রার গাড়ির মালিকানা বদল করা যাবে। কিন্তু অন্যত্র গাড়ির মালিকানা বদল করা যাবে বি এস -৩ মাত্রার গাড়িতে। তবে, সে ক্ষেত্রে গাড়ির বয়স অবশ্যই ১৫ বছরের কম হতে হবে।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ির বয়স ন’বছর হয়ে গেলে তা আর বাণিজ্যিক গাড়িতে পরিবর্তন করা যাবে না। ফলে নতুন নির্দেশিকার পরে কলকাতায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি হাতবদল হয়ে রাজ্যের অন্যত্র চলার প্রবণতায় ছেদ পড়বে।
নতুন এই নির্দেশিকার পরে বাস পরিষেবা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে একাধিক বাস সংগঠন। ‘অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পরিবহণ ব্যবসা এখন অলাভজনক। তাই অনেক মালিকই বিপুল বিনিয়োগ করে নতুন গাড়ি কিনতে পারবেন না। ফলে রাস্তায় বাসের চলাচল কমে যাবে।’’
‘মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘১৫ বছরের পুরনো গাড়ি নিয়ে আমাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিলই। এ বার ওই গাড়ি বিক্রি করার সুযোগ থাকছে না, সুতরাং তা বাতিলই করতে হবে।’’ ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর তরফে টিটু সাহা বলেন, ‘‘বাসমালিকদের আর্থিক ক্ষমতা কমছে। গাড়ির মেয়াদ ফুরোলে নতুন বাস নামানোর লোক মিলবে না।’’