তনুশ্রী চক্রবর্তী।
বছর কয়েক আগে জনপ্রিয় টিভি শোয়ে গানের অডিশন দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন তিনি। নামী শিল্পী-বিচারকেরা মানতে চাননি, আপাত ভাবে পুরুষ, কণ্ঠে নারী সেই গায়ককে।
রূপান্তরকামী মেয়ে বা ‘ট্রান্সওম্যান’ তনুশ্রী চক্রবর্তী সেই জ্বালা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। গত বছর লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারও করিয়েছেন তিনি। কিন্তু দেশের প্রথম সারির নাট্য শিক্ষাকেন্দ্র ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-য় পরীক্ষা দিতে গিয়েও একই বিড়ম্বনায় পড়েছেন তনুশ্রী।
ভর্তি পরীক্ষার ফর্মে পুরুষ বা মহিলা ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি নেই। ফলে, পরীক্ষায় বসাই কেঁচে যেতে বসেছে তাঁর। সমস্যা মেটাতে এনএসডি-তে ‘ইমেল’ করেও লাভ হয়নি। ফলে, হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেছেন তনুশ্রী।
দু’বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে স্পষ্টই বলা হয়েছিল, শুধু পুরুষ বা মহিলা নন, তৃতীয় লিঙ্গ তথা রূপান্তরকামীদের অস্তিত্ব এবং মৌলিক অধিকারও মানতে হবে। দীর্ঘ বৈষম্যের জেরে শিক্ষা-চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ও সংরক্ষণও তাঁদের প্রাপ্য। বাস্তবে কিন্তু সেই রায় কার্যকর হতে এখনও পদে পদে বাধা।
কলকাতার মঞ্চে নাট্যকর্মী তনুশ্রীর কথায়, ‘‘আমি পরীক্ষায় বসলে তৃতীয় লিঙ্গের এক জন হয়েই বসব। অস্ত্রোপচার হলেও জন্মসূত্রে তো মেয়ে নই আমি। আবার পুরুষও নই। সুতরাং ট্রান্সওম্যান বা তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়েই বাঁচব।’’ নান্দীকার-এর নাচনী, মাধবী প্রমুখ নাটকে কাছ থেকে তনুশ্রীকে দেখেছেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘একসঙ্গে গানবাজনা-অভিনয় পারে এমন শিল্পী খুব বেশি আসে না। তনুশ্রীর সেই গুণ আছে।’’ আর অভিনয়ের ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া কখনওই কোনও বাধা নয় বলে মনে করেন স্বাতীলেখা।
আরও পড়ুন...
কলকাতায় গাড়ির দামেই মিলতে পারে নিজের বিমান
এনএসডি-র ডিরেক্টর ভামান কেন্দ্রে নিজেও বিষয়টি শুনে বিব্রত। বলছেন, ‘‘আমি তো নিজেই এনএসডি রেপার্টরি-র ‘জানেমন’ নাটকটায় রূপান্তরকামীদের কথা তুলে ধরেছি। রূপান্তরকামী মেয়ে বা পুরুষের অভিনয়ের ক্ষেত্রে সমস্যাই থাকার কথা নয়।’’ তাঁর ধারণা, কোনও ভাবে তনুশ্রীর পাঠানো ‘ইমেল’ হয়তো আধিকারিকদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। তবে তনুশ্রীর সমস্যা বুঝলেও আদালতের বিষয় নিয়ে কিছু না বলার পক্ষপাতী এনএসডি-অধিকর্তা।
এর আগে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ তথা ‘আদার’ পরিচয়ে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়ে সুবিচার পান আর এক জন রূপান্তরকামী মেয়ে অত্রি কর। অত্রিকে তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয়ে ‘স্টেট ব্যাঙ্ক’-এর পরীক্ষায় বসতে দিতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাই মে মাসের গোড়ায় এনএসডি-র পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেতে হাইকোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছেন এই গর্বিত ‘ট্রান্সওম্যান’।