অঘটন: দাউ দাউ করে জ্বলছে স্টেশনের দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
রেল স্টেশনে আগুন জ্বালিয়ে খাবারের দোকান চালানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে প্রচার চালালেও পরিস্থিতি যে বদলায়নি, রবিবার তার প্রমাণ মিলল শিয়ালদহ-ক্যানিং শাখার ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশনে। এ দিন সকালে ওই স্টেশনে বিধ্বংসী আগুন ছড়িয়ে পড়ে সম্পূর্ণ পুড়ে গেল দশটি দোকান। আগুনের ভয়াবহতায় প্রায় ১৫ মিটার পরিসরে প্ল্যাটফর্মের শেডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের জেরে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই শাখায় আপ এবং ডাউন লাইনে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় শহরতলির লোকাল ট্রেনের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়।
রেল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি চায়ের দোকান থেকে আচমকা আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। ঠাসাঠাসি করে থাকা পর পর দোকানে আগুন ধরে যায়। ত্রিপল-সহ বিভিন্ন দাহ্য জিনিসের উপস্থিতি আর দমকা হাওয়ার কারণে আগুনের লেলিহান শিখা প্ল্যাটফর্মের শেড ছুঁয়ে ফেলে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিচার করে বেলা ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ ওই শাখায় আপ এবং ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। খবর দেওয়া হয় দমকল বিভাগে। স্টেশনে পৌঁছনোর সঙ্কীর্ণ পথের কারণে দমকলের গাড়ি ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয়।
আগুন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনই শুরুতে তা নেভানোর কাজে হাত লাগান। আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে স্থানীয়েরা প্ল্যাটফর্মে জমা করা বিভিন্ন দোকানের জিনিস উল্টো দিকে রেললাইনের উপর ফেলতে থাকেন। আগুনের দাপটে প্ল্যাটফর্মের শেডের বেশ খানিকটা পুড়ে যায়। সাড়ে ১১টা নাগাদ দমকলবাহিনী এসে আগুন লাগানোর কাজে হাত লাগায়। এর পরে আরও ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি চায়ের দোকানের পাশে একটি জায়গায় দাহ্য আবর্জনা জমা করা ছিল। ওই আবর্জনায় কেউ ধূমপান করে সিগারেটের টুকরো ফেলায় আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে স্থানীয় লোকজন স্টোভ, সিলিন্ডার দ্রুত সরিয়ে ফেলেন। তা না হলে আগুন আরও ভয়াবহ হতে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয়েরা।
রেল সূত্রের খবর, ওই শাখায় ডাউন লাইনে ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ এবং আপ লাইনে ১২টা ২৫ মিনিট নাগাদ খুলে দেওয়া হয়। সাড়ে ১২টার পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে শিয়ালদহ দক্ষিণে ক্যানিং শাখার ট্রেন চম্পাহাটি পর্যন্ত চালানো হয়। ১২টা ৩৭ মিনিট নাগাদ চম্পাহাটি থেকে ক্যানিং অভিমুখে এবং ক্যানিং থেকে ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ অভিমুখে ট্রেন ছাড়ে। প্রায় দু’ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ থাকায় ক্যানিং শাখার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। ওই বিপত্তির কারণে দু’টি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়। একটি লোকাল ট্রেনকে সংক্ষিপ্ত পথে চালানো হয়। এ ছাড়াও, দু’টি লোকাল মাঝপথে থমকে ছিল।
মাস কয়েক আগেই শিয়ালদহ দক্ষিণের ডায়মন্ড হারবার শাখার নেতড়া স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল। তার আগে বজবজ স্টেশনেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে রেলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে টানা প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন স্টেশনে দখলদার উচ্ছেদ করতে অভিযানও চালানো হয়। যদিও তার পরেও সমস্যাথেকে গিয়েছে বলে মানছেন রেল কর্তারাই।