হেডফোন কানে রেললাইনে পা, মৃত্যু প্রৌঢ়ের

রেলপুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে ট্রেনে কাটা পড়েন উল্টোডাঙার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা জগদীশ কর্মকার (৫৫)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে লাইনের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন ওই ব্যক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

রাস্তা হোক বা রেল লাইন, মোবাইল-হেডফোন কানে দিয়েই ক্রমাগত চলছে বিপজ্জনক ভাবে পারাপার। ছবি: শৌভিক দে

দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক! কিন্তু হুঁশ আর ফিরছে কই?

Advertisement

কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ঘটনার পরেই রেলপুলিশের কড়া নজরদারিতে কিছু ক্ষণ বন্ধ রইল ঝুঁকির পারাপার। কিন্তু বিকেলেই আবার যে কে সে-ই অবস্থা শিয়ালদহ শাখার বিধাননগর রোড স্টেশনে।

রেলপুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে ট্রেনে কাটা পড়েন উল্টোডাঙার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা জগদীশ কর্মকার (৫৫)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে লাইনের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন ওই ব্যক্তি। কানে ছিল সাদা রঙের হেডফোন। আপ লাইনে যে শান্তিপুর লোকাল চলে এসেছে, তা খেয়ালই করেননি তিনি। মুহূর্তে ট্রেনের চাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জগদীশবাবুর।

Advertisement

বিধাননগর রোড স্টেশনের এক নম্বর এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে ওই জায়গা দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার করেন বহু যাত্রী। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে সাবওয়ের পাশ দিয়ে রেললাইন ধরে কিছুটা হাঁটলে সিঁড়ি। সেখান দিয়ে নেমে উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজারগামী বাস বা অটো পাওয়া যায়। দু’টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যবর্তী অংশ লাইন পারাপারের পক্ষে বেশ বিপজ্জনক। রেলিং যেখানে শেষ হচ্ছে, তার নীচে রয়েছে উল্টোডাঙা সাবওয়ে। আপ লাইনে ট্রেন এলে অনেক সময়ে যাত্রীরা ভারসাম্য রাখতে পারেন না। আপের পাশাপাশি ডাউন লাইনে ট্রেন চলে এলে বিপদের সম্ভাবনা আরও বাড়ে। যাত্রীদের সে সব অজানা নয়। তা সত্ত্বেও সাবধান হন না তাঁরা। শনিবার বিকেলের ছবি অন্তত সে কথাই বলছে।

হেডফোন বা মোবাইল কানে লাইন পারাপার যেমন চলছে, তেমনই অব্যাহত বেপরোয়া পারাপার। এ দিনই দেখা গেল, ডাউন লোকালে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে নামলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সঞ্জীব তপাদার। মায়ের চোখে সদ্য ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই অবস্থায় বৃদ্ধা মায়ের হাত ধরে রেললাইন ধরে হাঁটছেন তিনি। কিছু ক্ষণ আগেই আপ লাইন দিয়ে রানাঘাট লোকাল গিয়েছে। ফুটব্রিজ থাকতে লাইন ধরে হাঁটছেন কেন? সঞ্জীব বলেন, ‘‘মায়ের ফুটব্রিজের সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হবে।’’ কিন্তু কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে বিপদ ঘটলে কী হত? সঞ্জীবের জবাব, ‘‘কিছু হবে না। আমাদের অভ্যাস আছে।’’

রেলপুলিশের দাবি, যাত্রীদের এই অভ্যাসই বিপদ ডেকে আনছে। এ দিন যেমন ন’বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে লাইন পার হতে গিয়ে কোনওক্রমে বাঁচলেন তেলেঙ্গাবাগানের বাসিন্দা সঞ্জিতা পাল। রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে গলার মুহূর্তে আপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন চলতে শুরু করে। তৎক্ষণাৎ মেয়ের হাত ধরে কোনও মতে বিপদ এড়ালেন তিনি। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিদিনই বিধাননগর রোড স্টেশনে এ ভাবে লাইন পেরোতে গিয়ে আহত হচ্ছেন কেউ না কেউ। যাত্রী-সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু শুনছেন না কেউ।

এ দিন মৃত জগদীশের ছেলে প্রসেনজিৎ কর্মকার বলেন, ‘‘সকালে চা খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল বাবা। দুপুর পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় খোঁজ করতে থাকি। সন্ধ্যায় খবর পাই কী হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement