Women Trafficking

অসহায় পরিবারে মিথ্যা ভরসা দিয়ে জমি তৈরি করছে পাচারকারীরা

বছর এগারো আগের ঘূর্ণিঝড় আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। তার থেকেও ভয়াবহ ছিল দুর্গত গ্রাম থেকে ভিন্ রাজ্যে মেয়ে পাচারের কাহিনি।

Advertisement

ঋষিকান্ত (সমাজকর্মী)

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:২৭
Share:

অভিজ্ঞতা বলে প্রাকৃতিক দুর্যোগই ওদের সেরা সময়। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ওরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে নতুন করে নেমে আসে আরও এক দুর্যোগ। যার সঙ্গে যুঝতে গিয়েই অন্ধকারে ডুবে যায় বহু মেয়ের জীবন।

Advertisement

বছর এগারো আগের ঘূর্ণিঝড় আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। তার থেকেও ভয়াবহ ছিল দুর্গত গ্রাম থেকে ভিন্ রাজ্যে মেয়ে পাচারের কাহিনি। যা সব চেয়ে বেশি হয়েছিল উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। পাচার রোধে ব্যবস্থা তৈরি করতে রাজ্য সরকারের লেগেছিল বছরখানেক। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে উদ্ধার করা হয় কয়েক জনকে। পুলিশ ও প্রশাসনের সক্রিয়তায় সম্প্রতি পাচারের হার কিছুটা কমেছিল।

ফের জোড়া দুর্যোগে দেখা যাচ্ছে সিঁদুরে মেঘ। বিশ্ব জুড়ে কোভিড-বিপর্যয় সার্বিক ভাবে নারী পাচারের রাস্তা খুলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা ছিলই। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শঙ্কা, যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে বাড়বে পাচার। তবে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গকে। কারণ, আমপানের ধাক্কাতেও বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক গ্রাম। সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার গ্রামে নোনা জল ঢুকে পড়ায় জমি-পুকুর চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও আবার বাড়িঘরের অস্তিত্ব ধুয়ে গিয়েছে। আয়হীন পরিবারের আশ্রয়স্থল এখন ত্রাণ শিবির। এ সবই যেন বিপদঘণ্টি বাজাচ্ছে। এ ধরনের পরিবারই বরাবর পাচারকারীদের লক্ষ্য হয়। এখন আমাদের মূল কাজ হওয়া উচিত ছদ্মবেশে থাকা ওই পাচারকারীদের চিহ্নিত করা।

Advertisement

পাচার ও বাল্যবিবাহ নিয়ে অভিযোগ জানাতে

• টোল ফ্রি নম্বর: ১০৯৮ (চাইল্ড লাইন)

• পুলিশ: ১০০

• রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বর: ৯৮৩৬৩০০৩০০ কথা বলার জন্য, মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপের নম্বর: ৯৮৩০০৫৬০০৬, ৯৮৩৬০৭৮৭৮০

আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ইতিমধ্যেই হয়তো দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দেওয়ার নামে ওরা ঢুকে পড়েছে। নিঃস্ব পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করছে। কিছু দিন পরে ওই পরিবারগুলির মেয়েদের ভাল কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাইরে নিয়ে যাবে ওরা। তার পর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার একই কাহিনি। বিক্রি হতে হতে একাধিক হাতে ঘুরবে মেয়েটি অথবা ঠাঁই হবে যৌনপল্লিতে। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকায় পাচারকারীরা সক্রিয় হতে থাকলেও এখনও বাইরে পাচার করতে পারেনি বলেই ভরসা করা যেতে পারে। তবে নিঃস্ব পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে ফেলেছে। এই পর্বকে পাচারকারীদের ‘ব্রিডিং পিরিয়ড’ বলা যায়।

আরও একটি বড় চিন্তা বাল্যবিবাহ। কোভিড পর্বেই রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের কাছে ১৩৮টি বাল্যবিবাহের অভিযোগ জমা পড়েছে। কাদের সঙ্গে পরিবারগুলি তাদের নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে সেটা অবশ্যই দেখা জরুরি।

সম্প্রতি আমাদের কাছে খবর আসে, এক কিশোরীকে বিয়ে করে দিল্লিতে বিক্রি করা হয়েছে। তাকে অবশ্য উদ্ধারও করা হয়েছে। কিন্তু কোভিড আবহেও হঠাৎ কেন পরিবারগুলি নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার। একে ঘরে খাবার নেই, তার উপরে কেউ যেচে মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে পরিবার ভাবে এতেই বুঝি মেয়েটি ভাল থাকবে। কোভিড আর আমপানের পরে আরও একটি আশঙ্কা বাড়ছে, নাবালক পাচারের। শিশু শ্রমের জন্য ব্যাপক হারে শিকার হবে ওরা।

এই পরিস্থিতি তৈরির আগেই এ রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন সকলকে সতর্ক থাকতে বলছে। একটি হেল্পলাইন ডেস্ক খুলেছে কমিশন। হাইকোর্টও পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে। পঞ্চায়েত এলাকায় সচেতনতা প্রসারের পাশাপাশি পাচার রুখতে যথাযথ ভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নজরদারি বাড়াতে এই সময়ে গ্রামের আগন্তুকদের নাম, ফোন নম্বর, ছবি-সহ রেজিস্টার তৈরি করা দরকার। রাজ্যের সব জেলায় শিশু সুরক্ষা কমিটি রয়েছে, তাদেরও কাজে লাগাতে হবে। স্পর্শকাতর গ্রামে গিয়ে মেয়েদের তালিকা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আন্তঃরাজ্য ট্রেন ও বাস চালু হলে ব্যাপক হারে পাচার বাড়বে। তাই পাচার রুখতে এখনই রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন জ‍রুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement