ফাইল চিত্র।
‘সাইটেশন’-এ ছবি তুলে ট্র্যাফিক-বিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে এ বার সব ধারাতেই মামলা করবে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। সম্প্রতি লালবাজারের তরফে প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এত দিন ‘সাইটেশন’ পদ্ধতিতে ছবি তুলে শুধুমাত্র কয়েকটি ধারায় মামলা করা যেত। কিন্তু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করতে হত কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে। লালবাজারের নয়া এই নির্দেশিকায় এ বার কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত না করেই আইন অনুযায়ী সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বছরকয়েক আগে ‘সাইটেশন’ পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম চালু হয় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশে। ওই পদ্ধতিতে কোনও কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত না করেই বিধি অমান্যকারীর মোবাইলে মামলা সংক্রান্ত মেসেজ বা জরিমানার অঙ্ক পাঠিয়ে দিত পুলিশ। মূলত ছোট অপরাধের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি তুলে মামলা করতে পারতেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা। কিন্তু বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, গতিসীমা লঙ্ঘন অথবা বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর মতো একাধিক অপেক্ষাকৃত বড় বিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে মামলা দায়ের করতে হত পুলিশকে। সেই অনুযায়ী জরিমানা মিটিয়ে কাগজপত্র ছাড়াতে হত গাড়ির মালিককে। তবে নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, সব ধরনের পথ-বিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রেই ‘সাইটেশন’ পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। মঙ্গলবার লালবাজারের তরফে শহরের প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডে এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। ওই দিন রাতেই নয়া বিধি অনুযায়ী বেশ কয়েকটি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ১৮৫ নম্বর ধারা, অর্থাৎ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বাদে বাকি সব ধারাতেই ‘সাইটেশন’ পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্মী বললেন, ‘‘এত দিন কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে কেস দিতে গেলে বেশির ভাগই প্রভাবশালী কাউকে ফোনে ধরার চেষ্টা করতেন। কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে ঝামেলাও করতেন কেউ কেউ। তাই বাধ্য হয়ে অনেক সময়েই ছোট কেস দিয়ে ছেড়ে দিতে হত। এ বার এই ঝামেলাটা কমবে।’’
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক ধরেই এই নয়া পদ্ধতি চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। তার জন্য প্রথমে শহরের কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি চালু করে দেখা হয়েছিল, বিষয়টি আদৌ বাস্তবসম্মত কি না। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘সাইটেশন’ পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নিতে গেলে ছবি তোলাটা বাধ্যতামূলক। তাই তাঁদের সন্দেহ ছিল, অ্যাপের সাহায্যে ঘটনার ছবি তুলে আদৌ কি সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটা দেখে নেওয়াও দরকার ছিল। সেই কারণেই আগে বিষয়টির মহড়া দিয়ে নেওয়া হয়। তাতে সাফল্য মিলতেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাইলট প্রকল্প হিসাবে দিনকয়েক আগেই সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে নতুন পদ্ধতি চালু করে দেখা হয়েছিল। সেখানে সাফল্য মিলেছে। এ বার তাই শহরের প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।’’