ইঙ্গিতপূর্ণ রবিবার!
সপ্তাহের শুরুর তিন দিনে শহরের যানজট কেমন হতে পারে, সেটা কার্যত বোঝা গিয়েছে এ দিন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভার জেরে সকাল থেকেই একের পর এক মিছিল ঢুকেছে। এর জেরে ছুটির দিনেও ভরদুপুরে কিছুটা যানজটে থমকেছেন লোকজন। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, রবিবার হওয়ায় ভোগান্তি কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু কাজের দিনে সমাবেশ-মিছিলে ভোগান্তি অনেকটা বেশি হবে।
আজ, সোমবার শহিদ মিনারে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জেরে সকাল থেকেই মিছিল শুরু হবে সারা শহরে। আগামিকাল, মঙ্গলবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিজেপি-র বিদ্বজ্জনদের মিছিল হবে। তার জেরে মধ্য কলকাতায় বড় মাপের যানজটের আশঙ্কা। বুধবার এনআরএসের হস্টেলে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শা-র খুনের প্রতিবাদে ‘আইন ভাঙো’ অভিযান রয়েছে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর। পুলিশকর্তাদের অনেকে বলছেন, কাজের দিনে যানজট কেমন হতে পারে, শনিবারই তা টের পেয়েছে কলকাতা। এক দিন কাটতে না কাটতেই ফের একই ভোগান্তি কপালে জুটতে পারে। চলবে লাগাতার তিন দিন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকেই শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে দল বেঁধে লোকজন ধর্মতলার দিকে যেতে শুরু করেন। তার ফলে লেনিন সরণি, সিআইটি রোড, এপিসি রোড ও এজেসি বসু রোডে যান চলাচলে প্রভাব পড়ে। মিছিল পার করাতে গিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয় ওয়েলিংটন ও রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডেও। সদলবলে মিছিলে এসেছিলেন মালদহের জেলা বিজেপি সম্পাদক শ্রাবস্তী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সকাল থেকেই আমাদের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী কলকাতায় এসেছেন। শিয়ালদহ থেকে মিছিল করে ধর্মতলায় এসেছেন তাঁরা।” বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড় বেড়েছে শিয়ালদহ স্টেশনে। শুধু দূরপাল্লার নয়, লোকাল ট্রেনেও প্রচুর সমর্থক শিয়ালদহে জড়ো হন। দুপুর একটার পর এতটাই ভিড় বাড়ে যে, প্ল্যাটফর্ম চত্বর পেরোতেই নাকাল হতে হয়েছে অনেককে।
মিছিলের গতি আঁচ করে পুলিশ সকালেই ধর্মতলা থেকে লেনিন সরণি ও এস এন ব্যানার্জি রোডে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করে। ওই দুই রাস্তা ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গাড়ি ঘোরানো হয়েছে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ দিয়ে। মিছিলের জন্য বন্ধ রাখা হয় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ ও এসপ্ল্যানেড ইস্ট। ফলে ধর্মতলা থেকে হাওড়া পৌঁছতে মেয়ো রোড পর্যন্ত যেতে হয়। পুলিশের দাবি, রবিবার শহরের রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই যানজটের গাড়ি ঘুরপথে চালানো হয়েছে।
এ দিন দক্ষিণ কলকাতা থেকে একটি বড় মিছিল সমাবেশে এসেছে। ফলে যানজট হয়েছে হাজরা মোড়-সহ দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের বেশ কিছু জায়গাতেও গাড়ির গতি থমকে গিয়েছিল। শোভাবাজার-জোড়াবাগান এলাকা থেকে স্থানীয় বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে ধর্মতলার দিকে আসে। পুলিশ জানায়, ওই মিছিলটি পার করানোর সময়েও যান চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। বিকেল চারটে নাগাদ সমাবেশ শেষ হয়। তার পরেই তড়িঘড়ি লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা খুলে খুলে দেয় পুলিশ। রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া কম থাকায় পরিস্থিতি সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
তবে কাজের দিনে পরিস্থিতি এত দ্রুত স্বাভাবিক হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, রবিবার গাড়ি কম থাকায় পরিস্থিতি সামলাতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু সোম, মঙ্গল ও বুধবার রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকবে। ফলে জনগণের ভোগান্তি কাটাতে পুলিশও সে ভাবে সফল হবে না বলেই আশঙ্কা করছেন লালবাজারের একাংশ। পুলিশ সূত্রের খবর, কাজের দিনে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ না-ও করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গাড়ি ঘুরিয়ে বা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে মিছিল পার করানো হবে।