জনসমুদ্র: শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো দেখার জন্য জনতার ঢল লেক টাউন এলাকার এক সার্ভিস রোডে। অষ্টমীর রাতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
পুজোর মূল পর্ব শুরু হতেই ভিআইপি রোডে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল বিধাননগর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক পরিচালন ব্যবস্থা। শ্রীভূমির পুজোকে ঘিরে সপ্তমীর সারা রাত কার্যত অচল হয়ে রইল ভিআইপি রোড। যার জেরে দীর্ঘ সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রইল ইস্টার্ন বাইপাসের একটি বড় অংশে। যানজটে আটকে চরম নাকাল হলেন পুজো দেখতে বেরোনো অসংখ্য মানুষ ও বিমানযাত্রীরা।
দমদম রোডের কালভার্টে ফাটল ধরায় ওই রাস্তায় ছোট গাড়ি, বাইক কিংবা রিকশা ছাড়া অন্য সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ। সেই কারণে বিটি রোডের দিক থেকে শ্রীভূমি ও দমদম পার্কের পুজো দেখতে আসা অসংখ্য গাড়ির যাতায়াতের রাস্তা ছিল ভিআইপি রোড। তার উপরে শ্রীভূমির পুজোকে ঘিরে তৃতীয়া থেকেই সন্ধ্যার পরে বন্ধ থাকছে লেক টাউনের ক্লক টাওয়ার থেকে যশোর রোড সংযোগকারী রাস্তাটিও। যে কারণে ভিআইপি রোড থেকে যশোর রোডমুখী গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাঙুরের ভিতর দিয়ে। বাঙুরে যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি যশোর রোডে উঠছে, তার ডান দিকেই রয়েছে দমদম পার্কের একাধিক পুজো। সেখানে যশোর রোডের গাড়ির যানজট তো রয়েইছে, তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভিআইপি রোড থেকে আসা গাড়ির ঢল। ফলে যশোর রোডের উপরে গাড়ি ছাড়লে আটকে পড়ছে ভিআইপি রোডের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিও। এ ছাড়া, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচের সার্ভিস রোড পুজোর সময়ে গাড়ির বদলে লোক চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য দিন সার্ভিস রোড ধরে চলা গাড়িগুলিকেও পুজোর সময়ে চলতে হয় ভিআইপি রোড ধরেই।
মঙ্গলবার রাতে ভিআইপি রোডের ট্র্যাফিক কার্যত অচল হয়ে পড়ার পিছনে এমন নানা কারণই উঠে আসছে। যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোয় সপ্তমীর রাতে জনস্রোত ভেঙে পড়ে। যতটা আন্দাজ করা হয়েছিল, তার কয়েক গুণ বেশি দর্শক ভিড় জমান মণ্ডপ দেখতে। ভিড়ের চাপে বেশ কিছু ক্ষণ মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন পুজোর উদ্যোক্তারাই। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে লেক টাউনের ফুটব্রিজ-সহ কয়েকটি জায়গায় লোক পারাপার করাতে বাধ্য হয় পুলিশ। আজ, নবমীর সন্ধ্যায় ভিড় সর্বাধিক হতে পারে বলেই আশঙ্কা পুলিশের।
বিধাননগর পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, পরিস্থিতি যেমন হবে, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা মতোই ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু সপ্তমীর রাতে অত্যধিক ভিড় হয়েছিল। যে কারণে ভিআইপি রোডের উপরে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।’’
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামী জানান, আন্ডারপাস দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষের দমবন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই লোক চলাচলের জন্য ক্লক টাওয়ারের রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পুলিশকে সব রকম ভাবে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকেরা সাহায্য করছেন বলেই দাবি দিব্যেন্দুবাবুর।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁদের অনেকেই সপ্তমীর রাতে ভিআইপি রোডের উপরে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা আটকে ছিলেন। রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স আটকে পড়তেও দেখা গিয়েছে। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের উপরে দেখা যায় গাড়ির লম্বা লাইন। এক ভুক্তভোগীর কথায়, ‘‘রাত ৯টা নাগাদ চিংড়িঘাটায় বাইপাস বন্ধ ছিল। পুলিশ সল্টলেকের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিল। এর পরে পিএনবি কিংবা সিএ আইল্যান্ডের মুখে যানজটে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ।’’ পাশাপাশি, দমদম পার্কের দিক থেকে কেষ্টপুরের মধ্যে ভিআইপি রোডের উপরে বাইকের পার্কিংও গাড়ির গতি থমকে যাওয়ার জন্য দায়ী বলেই অভিযোগ অনেকের।