কা কা শুনে শোভন-জাগরণ, পথে আলো কমাচ্ছে পুরসভা

বিশেষ কাজে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সাড়ে ১২টা নাগাদ নিস্তব্ধতা ভেদ করে কানে আসে কাকের আওয়াজ। মেয়র বুঝতে পারেন, অতিরিক্ত আলোর ঝলকানি পাখিকুলের স্বাভাবিক জীবন বদলে দিয়েছে। গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে উপলব্ধি হয়, যা ভেবেছেন তা ঠিকই। অঞ্চলটা জুড়ে একেবারে আলোয় আলোময়।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৩
Share:

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

আঁধার ভাল।

Advertisement

মাঝরাতে শহরে বেরিয়ে এই উপলব্ধি কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।

শহরে আলোর এত ‘ঝাঁঝ’ আগে টের পাননি তিনি। অবশেষে কয়েকটা কাক-ই হুঁশ ফেরাল কলকাতার মহানাগরিকের।

Advertisement

ঠিক কী হয়েছিল?

বিশেষ কাজে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সাড়ে ১২টা নাগাদ নিস্তব্ধতা ভেদ করে কানে আসে কাকের আওয়াজ। মেয়র বুঝতে পারেন, অতিরিক্ত আলোর ঝলকানি পাখিকুলের স্বাভাবিক জীবন বদলে দিয়েছে। গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে উপলব্ধি হয়, যা ভেবেছেন তা ঠিকই। অঞ্চলটা জুড়ে একেবারে আলোয় আলোময়।

মঙ্গলবার পুরসভায় এসেই মেয়র ডেকে পাঠান আলো দফতরের আধিকারিকদের। নির্দেশ দেন, কাউন্সিলর বললেই এ বার থেকে আর আলো লাগাবেন না। বাতিস্তম্ভ লাগানোর আবেদন এলে আগে দেখবেন ওই এলাকায় কতটা গাছগাছালি রয়েছে, পাখির ক্ষতি হবে কি না।

মেয়রের নির্দেশে স্তম্ভিত অনেকেই। পুরসভার এক অফিসার জানান, এক সময়ে আলো লাগানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল শহর জুড়ে। কোন কাউন্সিলর কতগুলি সোডিয়াম ভেপার, মেটাল হ্যালাইড, হাইমাস্ট লাগাতে পেরেছেন, তার হিসেব চলত। যে যত বেশি পেরেছেন, তিনি নাকি ততই কাজের। মেয়রও এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি। কাউন্সিলরের কথা মতো আলো দফতরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলো লাগাতে হয়েছে। এ বার তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান মেয়র।

কেন তাঁর এই ‘ভাবাবেগ’?

মেয়র বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে বেহালায় আমার পূর্বতন ওয়ার্ডে পর্ণশ্রী ঝিলের পাশে একটা হাইমাস্ট (১৬ মিটার উঁচু বাতিস্তম্ভে ৬-৮টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন উজ্জ্বল বাতি) লাগানো হয়। ওই ঝিলের আশপাশের গাছে প্রচুর পরিযায়ী-সহ নানা পাখির যাতায়াত। যে দিন হাইমাস্ট লাগানো হল, সে দিনই দেখি পাখিগুলি প্রায় অন্ধের মতো গাছের নীচে ঘোরাফেরা করছে। পরের দিনও একই দৃশ্য দেখে আলো নেভানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’

এ দিনও দক্ষিণ কলকাতার বহু জায়গায় একই দৃশ্য তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। মেয়র বলেন, ‘‘নিরাপত্তার স্বার্থে আলোর প্রয়োজন। তবে তার একটা সীমারেখা থাকা উচিত। রাত বারোটায় কাকের ডাক সেই শিক্ষাই দিয়েছে।’’ তিনি জানান, দিন কয়েক আগে যাদবপুর এলাকার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পার্কে ২৩-২৪টি মেটাল হ্যালাইড জ্বলতে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে পুর-অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল অত আলো ওই পার্ক থেকে সরিয়ে দিতে। তাঁর কথায়, ‘‘যত্র তত্র আলো লাগানোর আগে কাউন্সিলরদেরও সতর্ক হতে হবে। আলো দফতরকে বলা হয়েছে, কেউ চাইলেই বাতিস্তম্ভ লাগাবেন না। পরিবেশের কথা মাথায় রাখুন।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে ১ লক্ষ ২০ হাজার সোডিয়াম ভেপার, এক লক্ষ মেটাল হ্যালাইড-সহ ২৫ হাজার ত্রিফলা রয়েছে। হাইমাস্টের সংখ্যা প্রায় ১০০। আরও ২৫টি হাইমাস্ট বসাতে রাজ্য সরকারের অনুদান পেয়েছে পুরসভা। তবে পরিবেশের কথা ভেবে সেখানে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাতির বদলে এলইডি লাগানো হবে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। এখন প্রতি মাসে প্রায় ৩২ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে পুরসভায়। মেয়রও জানিয়েছেন, আলো কম লাগানো হলে বিলও কমবে। সাশ্রয় হবে। পুর-মহলে গুঞ্জন, দেরিতে হলেও হুঁশ ফিরছে মেয়রের। সে জন্য সাধুবাদ অবশ্যই প্রাপ্য ‘কা কা’ ডাকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement