বিক্রম-সোনিকা। বন্ধুত্বের সে দিন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে
তাই বলে শ্রীঘরেই যাবেন অভিনেতা!
আহা, প্রথম থেকে কেন যে সত্যিটা গোপন করলেন? না হলে হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না।
নিজের কাজের ফল যে ভুগতেই হবে! যত খারাপই লাগুক না কেন।
মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরে শুক্রবার টেলি-পাড়ায় কান পাততেই উঠে এল এমনই সব উক্তি। এ প্রসঙ্গে টেলি-পাড়া বিভক্ত হয়েছিল আগেই। দোষ কার, সে বিতর্কে সরব হয়েছিলেন অনেকেই। এ দিন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে সেই বিভাজনই।
বিপদের সময়ে বন্ধুর পাশেই থাকতে চাইছেন কেউ, কারও আবার যুক্তির কাছে হার মানছে আবেগ। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়। তার প্রেক্ষিতে বিক্রমের গ্রেফতার হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিক্রমের সহকর্মীদের আর এক অংশ অবশ্য খুশি নয় তাঁর আচরণে। তাঁদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, অনিচ্ছাকৃত ভাবেও যদি ঘটে থাকে দুর্ঘটনা, বিক্রম আগেই সব কথা স্বীকার করে নিলেন না কেন? কীসের ভয়ে এত দিন ধরে সত্য গোপন করলেন তিনি, সে প্রশ্নও উঠছে।
শুক্রবার সোনিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য যেমন বিক্রমের গ্রেফতারে সুবিচারের আশ্বাস পেয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘‘কিছু মানুষ ভেবেছিলেন আমরা আশা ছেড়ে দেব, হাল ছেড়ে দেব।’’ অভিনেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘গ্রেফতারের খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে। যা হয়েছে, সেটা তো দুর্ঘটনাই।’’ তাঁর মনে হচ্ছে, ‘‘মেয়েটি মারা না গেলে হয়তো গা়ড়ির গতির বিষয়টি এত গুরুত্বই পেত না।’’ তবু বিক্রম তো ক্ষমা চাইতে পারতেন, বারবার মনে হচ্ছে অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছিল, সেটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হয়েছিল। কিন্তু ও সংবাদ মাধ্যমকে ডেকে যে ভাবে মিথ্যাচার করল, সেটা সমর্থন করি না। আইনের ক্ষমতা যে এখনও রয়েছে সেটা আবার প্রমাণ হয়ে গেল। যে দোষ করেছে, সে শাস্তি পাবে।’’ যা হয়েছে, সেটার মুখোমুখি তো হতেই হবে বিক্রমকে। সহকর্মীর গ্রেফতারের খবর পেয়ে এমনই
মনে হচ্ছে অভিনেতা বাদশা মৈত্রের। যদিও তিনি বলেন, ‘‘ছোট ভাইয়ের মতো হয়। বিক্রমকে যতটুকু চিনি, ওকে তো খারাপ বলতে পারব না। বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক।’’
সহকর্মীদের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই বিক্রমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই এ বার ন্যায়বিচার হবে। যেমন অভিনেত্রী স্নেহা চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এক জন মানুষের এ ভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। তাই কে দোষী, সেটা বলতে পারব না। তবে পুলিশ নিশ্চয় সব দিক খতিয়ে দেখে বিক্রমকে গ্রেফতার করেছে। আশা করছি ন্যায়বিচার হবে।’’
কেউ কেউ আবার মনে করছেন, এই দুর্ঘটনায় দোষ দু’পক্ষের। বিক্রম যদি মত্ত অবস্থাতেই ছিলেন, তো সোনিকা কেন তাঁর গাড়িতে উঠলেন? সেই প্রশ্ন তুলছেন অভিনয় জগতের অনেকেই। যেমন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যা হয়েছে সেটা দুঃখজনক। কিন্তু সোনিকা কেন মত্ত এক জনের সঙ্গে যেতে রাজি হল? ওকে তো বাড়ি থেকে কেউ জোর করে আনেনি। দু’জনেই যদি দায়িত্বশীল হতো, তা হলে এমনটা ঘটত না।’’
টেলি-পাড়ার অনেকেই আবার দোষ দিচ্ছেন বেড়ে চলা পার্টি-সংস্কৃতিকে। উদ্দামতার মাশুলই গুনতে হচ্ছে তরুণ অভিনেতাদের অনেককে। সোনিকা ও বিক্রমও তারই শিকার বলে মনে করেন অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘বিক্রমের জন্য খুব খারাপ লাগছে। ও খুব ভদ্র ছেলে। আইনের উপরে আস্থা রয়েছে। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা এমন উদ্দাম জীবন যাপন পছন্দ করছে, তাতেই হয়তো বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।’’
অভিনেতা বিক্রম যে জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করতেন, তার লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কাজের সূত্রেই বিক্রমের সঙ্গে পরিচয়। এখন একসঙ্গে কোনও কাজ করছি না। গ্রেফতারের ঘটনাতেও কিছু বলব না। আইনে যা আছে, তা-ই হবে।’’ লীনাদেবীর ছেলের পরিচালনায় সঙ্গে একটি ছবিও করেছেন বিক্রম। কিছু দিন আগে সেটা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে বিক্রমকে নিয়ে কোনও কাজ করার পরিকল্পনা নেই বলে জানালেন তিনি।