বিরল রোগে কেন্দ্রীয় নীতি রূপায়ণের দাবি

রবিবার সায়েন্স সিটিতে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রথম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ‘কিওর এসএমএ ইন্ডিয়া’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০৩:২০
Share:

একত্রে: এসএমএ জাতীয় সম্মেলনে ওই রোগে আক্রান্ত শিশুরা। রবিবার, সায়েন্স সিটিতে। নিজস্ব চিত্র

মধ্যপ্রদেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তরুণী কনিষ্ঠতম উদ্যোগপতির পুরস্কার পেয়েছিলেন। গত সোমবার বিরল জিনঘটিত রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোফি’তে (এসএমএ) আক্রান্ত সেই ৩৩ বছরের সান্ত্বনা অরসের মৃত্যু হয়েছে। দেশ জুড়ে প্রতি মাসে কোনও না কোনও বাবা-মা সন্তানহারা হচ্ছেন। কলকাতায় আয়োজিত প্রথম এসএমএ জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চে কথাগুলো বলার সময়ে গলা ধরে আসছিল অর্চনা পান্ডার। এসএমএ রোগে আক্রান্ত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অনুষ্কা পান্ডার মা বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত কমিটিতে অভিভাবকদের প্রতিনিধি। নিজেকে সামলে অর্চনা বলেন, ‘‘আমাদের হাতে সময় নেই। একটা করে মৃত্যুর খবরে নিজের সন্তানকে হারানোর ভয় বুকের ভিতরে চেপে বসে।’’ জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চে বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানের মায়েদের ‘মন কি বাত’ একটাই— যত দ্রুত সম্ভব বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতি কার্যকর হোক।

Advertisement

রবিবার সায়েন্স সিটিতে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রথম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ‘কিওর এসএমএ ইন্ডিয়া’। দেশ জুড়ে এসএমএ আক্রান্তদের অভিভাবকদের নিয়ে এই মঞ্চ বেশ কয়েক বছর ধরেই সক্রিয়। এখনও পর্যন্ত ওই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন।

চিকিৎসক সংযুক্তা দে জানান, বাবা এবং মা দু’জনেই ‘সারভাইভাল মোটর নিউরন’ জিনের বাহক হলে সন্তান এসএমএ আক্রান্ত হতে পারে। সংযুক্তার কথায়, ‘‘আমাদের শরীরের নড়াচড়া মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক মেরুদণ্ডে বার্তা পাঠায়। মেরুদণ্ড সেই তথ্য যে স্নায়ুর মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয় তার নাম মোটর নিউরন। এই রোগে আক্রান্তদের মোটর নিউরন শুকিয়ে যায়। যার ফলে মাংসপেশীগুলি ঠিক মতো কাজ করে না। মাংসপেশী শুকিয়ে গেলে হাত-পা বেঁকে যেতে শুরু করে। শরীরে কোনও ভারসাম্য থাকে না।’’

Advertisement

বছর তিনেক হল আমেরিকায় এই রোগের চিকিৎসার ওষুধ বার হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। প্রথম বছরে শুধু ওষুধের খরচ পাঁচ কোটি টাকা। মুম্বইয়ের বাসিন্দা এসএমএ আক্রান্ত আরব শর্মার মা আল্পনা শর্মা বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বার বিজেপির সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম একশো দিনের কর্মসূচিতে বিরল রোগের নীতি কার্যকর করার বিষয়টি রেখেছে। কিন্তু যত দেরি হবে আমরা সান্ত্বনার মতো প্রতিভাদের হারাব।’’

এই উদ্বেগের কারণেই গলা ধরে আসে অর্চনার। মেয়ে উর্যস্বাতী রায়চৌধুরীর গানের গলায় যখন সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন কাতর কণ্ঠে মা লোপামুদ্রা রায়চৌধুরীর আর্জি, ‘‘ওদের চিকিৎসায় যে ওষুধ বার হয়েছে তা যেন দ্রুত এ দেশে পাওয়া যায়। এই ওষুধ পেয়ে বিদেশের বাচ্চাদের উন্নতি হয়েছে সেই ভিডিয়ো দেখেছি। আমার সন্তানকে সেই ওষুধ দিতে পারছি না, এটা ভাবলে কেমন লাগে বলুন!’’ আর এক সন্তানের মা মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘একটা সময় আসবে যখন সর্বশক্তি দিয়েও আমরা বিপদ আটকাতে পারব না। ওষুধটা পেলে বাচ্চাগুলোর শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পারি।’’

একে ওষুধ নেই। তার উপরে যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয় হয়রানির মুহূর্তগুলো। সেই সব মুহূর্তের কথাই বলছিলেন ওড়িশার রৌরকেল্লার বাসিন্দা প্রীতি লাল। তাঁর ছেলে বেদান্ত লাল ১২ বছর বয়সেই পুরোপুরি হুইল চেয়ার নির্ভর হয়ে পড়েছে। কোথাও ছেলেকে নিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি, ক্যাব বা ট্যাক্সি ছাড়া উপায় নেই।

প্রীতি বলেন, ‘‘হুইল চেয়ার নির্ভর জেনেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী ছেলেকে উঠে দাঁড়াতে বলছে, এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এখন তো দু’ঘণ্টা আগে থেকে চলে যাই। কারণ জানি, ছেলের রোগ নিয়ে বোকা বোকা কিছু প্রশ্ন করা হবে এবং ধৈর্য ধরে সেগুলোর উত্তর দিতে হবে।’’

এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূল সাংসদ তথা আইএমএ-র সভাপতি শান্তুনু সেন যখন এসএমএ নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার কথা বলেন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন সপ্তাংশুদের অভিভাবকেরা। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘আগামী দিনে এই রোগ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বিরল রোগের ওষুধ ছাড়া যে আনুষঙ্গিক খরচ থাকে, তা স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় ঢোকানোর বিষয়টি আমরা দেখব।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement