—ফাইল চিত্র।
সরোবরের পাড় ঘেরা রয়েছে লোহার শিকল দিয়ে। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। কেউ পাড়ে বসে জামাকাপড় কাচাকাচি করছেন। কেউ আবার পরিজনের পারলৌকিক কাজকর্ম সেরে জলেই ফেলে দিচ্ছেন আবর্জনা। দেখার কেউ নেই। বাধা দেওয়ারও কেউ নেই। পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরের পশ্চিম পাড়ের এখন এমনই দশা। সরোবরের জল পর্যন্ত বহিরাগতদের পৌঁছনোর পথ বন্ধ করার কোনও ব্যবস্থাই নেই সেখানে। তাই ছটের পুণ্যার্থীরা খুব সহজেই ওই পথে সরোবর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারেন।
জলের দূষণ ঠেকাতে এ বার রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর— দু’জায়গাতেই ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ‘জাতীয়’ তকমা পাওয়া রবীন্দ্র সরোবরে গত বছর পুলিশি বাধা টপকেই ছটপুজো করতে ঢুকে পড়েছিলেন পুণ্যার্থীরা। কিন্তু সুভাষ সরোবরে সেই বাধা ছিল না গত বার। তাই নিশ্চিন্তেই সেখানে ছটপুজো সেরে জলে আবর্জনা বিসর্জন দিয়েছিলেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী।
এ বছর সেই সুভাষ সরোবরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু সরোবরের পশ্চিম পাড় একেবারে উন্মুক্ত। এবং সরোবরের ওই অংশে পৌঁছে যাওয়ার অনেকগুলি রাস্তা রয়েছে। সুভাষ সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ সূত্রের খবর, সেখানে ছ’টি গেট রয়েছে। সেগুলি বন্ধ। করোনার কারণে দিনের নির্দিষ্ট দু’টি সময় ছাড়া সেই সব গেট খোলে না। কিন্তু চিন্তা বাড়িয়েছে অন্য দিকগুলি।
আরও পড়ুন: ছটপুজো নিয়ে পরিবেশ আদালতের রায়ই বহাল
সুভাষ সরোবর চত্বরে ঘুরে দেখা গেল, একটি অংশে পাঁচিল মাত্র দেড় ফুটের। তা ছাড়া, নারকেলডাঙা মেন রোডের দিক থেকে গাড়ি চলাচলের রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে ঢুকে অনায়াসেই পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে পশ্চিম পাড়ে। আবার বেলেঘাটা থানার পাশ দিয়েও যে রাস্তা সরোবরের দিকে চলে গিয়েছে, সে দিক দিয়েও পশ্চিম পাড়ের দিকে পৌঁছনো যায়। ওই পাড়ের কাছেই রয়েছে একটি খেলার মাঠ। সে দিক দিয়েও যে কেউ সরোবরে পৌঁছে যেতে পারেন। তাই কী ভাবে পুণ্যার্থীদের রাস্তা প্রশাসন আটকাতে পারে, তা নিয়েই চলছে জল্পনা। সেখানে ছটপুজো করা যাবে ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই সরোবরের পশ্চিম পাড়ে জায়গা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মূলত কাদাপাড়া, বেলেঘাটা, মানিকতলা, বিধাননগর ও ফুলবাগান থেকেই পুণ্যার্থীরা সুভাষ সরোবরে ছটপুজো করতে যান।
ছটপুজোর আবর্জনা-সহ বিভিন্ন কারণে সুভাষ সরোবরের জল দূষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন’। তারাই সরোবরের জলে মাছ ছাড়ে এবং মাছের দেখভাল করে। ওই সংগঠনের এগজিকিউটিভ সদস্য সুব্রত সেন জানান, প্রতি বার ছটপুজোর পরে তাঁদের সংগঠনের তরফে কেএমডিএ-র সঙ্গে যৌথ ভাবে জল পরিষ্কার করা হয়। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘এ বছরেই তিন বার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার জন্য জলের দূষণ খানিকটা হলেও দায়ী।’’
কী বলছেন পুণ্যার্থীরা?
সরোবর লাগোয়া নারকেলডাঙা মেন রোডের উপরেই রয়েছে কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মীদের কোয়ার্টার্স। সেখানে বহু মানুষ ছটপুজো করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, ছটের বর্জ্য বিসর্জন নিয়ে তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত। ওই কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা রাধা হরি ও তাঁর ছেলে অনিল হরি জানালেন, এ বার সরোবরে যাওয়া বারণ। তাই তাঁরা বাড়িতেই স্নান করে প্রসাদ মুখে দেবেন। আর এক বাসিন্দা গোপাল হরি ও তাঁর পরিবারের বক্তব্য, ‘‘আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। ছটপুজো হবেই।’’ কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।