সোমবার সঞ্জীবের একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়। সঞ্জীবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে রয়েছি যাদবপুর ইউনিভর্সিটিতে। কেন...কেন? আমি আজকে দাঁড়িয়ে বলছি, কোন টিচারের কলার ধরতে হবে সঞ্জীব প্রামাণিককে বলো। এত বড় ক্ষমতা রাখে সঞ্জীব প্রামাণিক। আমার হিস্ট্রি, অ্যাক্টিভিটি অনেকে জানো না।’’
বিতর্কে তৃণমূল ছাত্রনেতা সঞ্জীব প্রামাণিক। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
তাঁর অডিয়ো ক্লিপ ঘিরে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সেখানে শিক্ষকের কলার ধরার কথাও বলেছেন। আর সেই অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সঞ্জীব প্রামাণিক সাফাই দিলেন, কলার ধরা যাকে বলে, সেই অর্থে কথাটা তিনি ব্যবহার করেননি। সেটি ‘রূপক’ অর্থেই ব্যবহার করেছেন!
সঞ্জীবের কথায়, “আমি মনে করি কলার ধরা মানে এখানে কলার ধরা নয়। এটা অনেক সময় রাজনৈতিক ভাবে রূপক অর্থে বিষয়গুলিকে ব্যবহার করা হয়।”
সোমবার সঞ্জীবের একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়। সঞ্জীবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে রয়েছি যাদবপুর ইউনিভর্সিটিতে। কেন...কেন? আমি আজকে দাঁড়িয়ে বলছি, কোন টিচারের কলার ধরতে হবে সঞ্জীব প্রামাণিককে বলো। এত বড় ক্ষমতা রাখে সঞ্জীব প্রামাণিক। আমার হিস্ট্রি, অ্যাক্টিভিটি অনেকে জানো না।’’
আনন্দবাজার অনলাইন এই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই না করলেও এই অডিয়ো ক্লিপটি যে তাঁর সেটি স্বীকার করেছেন সঞ্জীব। পাশাপাশি এই ক্লিপ প্রসঙ্গে সাফাই দিয়ে ছাত্রনেতার দাবি, “এই অডিয়ো কোথা থেকে কী ভাবে আসছে এবং কবে, কোথায় হয়েছে, সেটাও যেমন একটা বিষয়। তা ছাড়া আমরা তো সচরাচর বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রকম কথা বলি। এই কথাগুলো কেন বলা হয়েছে, সেই বিষয়গুলিও দেখতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, টিএমসিপি করার জন্য যাদবপুরে বামপন্থীরা নানা ভাবে হেনস্থা করে, উচ্চশিক্ষায় বঞ্চিত করে ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এ সবের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই টিএমসিপির অভিযোগ রয়েছে বামপন্থী শিক্ষক এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, যাদবপুরে টিএমসিপি আসছে, এটা বুঝে গিয়েছে বামপন্থীরা। ওদের হাতে কোনও অস্ত্র নেই, তাই এখন এ সব অডিয়ো প্রকাশ্যে আনছে। এবং অডিয়ো রাজনীতি করছে।
এর পরই সঞ্জীবের সাফাই, কলার ধরা বলতে যা বোঝায়, তা তিনি বলতে চাননি। রূপক অর্থেই কথাটি ব্যবহার করেছেন। যেমনটা রাজনীতিতে করা হয়ে থাকে।
ছাত্রনেতার ‘রূপক অর্থে কলার ধরা’ প্রসঙ্গে যাদবপুরের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “এক জন ছাত্রের মুখে এ ধরনের কথা শোনা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। সাধারণ ভাবে কোনও ছাত্রের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে ইচ্ছে করে না কোনও শিক্ষকের।”
অধ্যাপক বিশ্বাস প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আগে শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা হত। এখন শিক্ষকের গায়ে হাত দেওয়াকে যদি বলা হয় সেটি ‘রূপক’ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলে বুঝতে হবে এর চেয়ে খারাপ অবস্থা, এর চেয়ে বড় নৈরাজ্যের পরিস্থিতি একটা শিক্ষায়তনে আসেনি।’’
পার্থপ্রতিমের কথায়, “ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলা হয়। সেটা যদি কোনও কারণে কুরুচিকর মন্তব্য এবং ভাবনার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, তা হলে যাদবপুরের এগনো বদ্ধ হবে। শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব, তাঁদের যদি মনে হয়, এই মন্তব্যগুলি ‘রূপক’, ‘ছোট এবং বিচ্ছিন্ন’ মন্তব্য, তা হলে বলব যে যাদবপুর বিশ্বের আঙিনায় রাজ্যের এবং রাজ্য সরকারের মুখ উজ্জ্বল করেছে, সেই পথ থেকে কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে উল্টো পথে হাঁটবে। এটা খেয়াল থাকে যেন।”
এই ধরনের মানসিকতা সমূলে বিতাড়ন করা উচিত বলেই মত তাঁর। আর এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকেই পদক্ষেপ করতে হবে। এই ধরনের মন্তব্য যাঁরা করছেন, তাঁদের বিচ্ছিন্ন করা, বোঝানো এবং ঠিক পথে চালিত করা শাসকদলের অন্যতম কাজ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “এটা যদি না করা যায়, তা হলে এই ক্যাম্পাসগুলি নৈরাজ্যের বধ্যভূমিতে পরিণত হবে।”