সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি মদন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভায় নিয়োগ মামলায় তাঁকে কী প্রশ্ন করেছে সিবিআই? সিবিআই আধিকারিকরা তাঁর বাড়ি থেকে বেরোতেই তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দাবি, তাঁর ক’টা বউ জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুধু তাই নয়, তিনিও সিবিআইকে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। জানতে চেয়েছেন, তাঁর অভিনীত সিনেমা সিবিআই আধিকারিকরা দেখেছেন কি না।
পুর-নিয়োগ মামলায় রবিবার সকালে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদনের ভবানীপুরের পৈতৃক বাড়িতে যায় সিবিআই। তার পর তাঁর দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআই। এমনকি, তৃণমূল বিধায়কের অফিসেও যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। টানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে যখন তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন, মদনের মুখে টেনশনের লেশমাত্র নেই। মুখে সেই পরিচিত হাসি। ব্র্যাকব্রাশ করা চুল, চোখে কালো রোদচশমা, কালো টিশার্ট-ট্রাউজ়ার্সে শোভিত মদন জানান, তাঁকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছে সিবিআই। এক বার তাঁর কাছে এ-ও জানতে চাওয়া হয় যে, তাঁর জীবনসঙ্গিনীর সংখ্যা কত।
মদনের দাবি, ঠিক কোন পুরসভায় নিয়োগ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, সেটাই ঠিক ভাবে বলেননি সিবিআই আধিকারিকরা। তিনি জিজ্ঞাসা করায় এক আধিকারিক নাকি বলেছেন, ‘‘ওই যে মিউনিসিপ্যাল নিয়ে সব হচ্ছে না? ওই জন্য এসেছি।’’ মদনের দাবি, এর পর তাঁকে সরকারি ভাবে অন রেকর্ড সিবিআই প্রশ্ন করে, তাঁর কত জন স্ত্রী। তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাকে বলল, আপনার একটা বৌ না দুটো বৌ? আমি বললাম, সেটা তো খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে। তবে এটা জানি, আমি হাঁটলেই ৫০ জন গোপিনী হাঁটবে। কিন্তু আমার নামে কোনও ৪৯৮ ধারায় মামলা নেই। আমার সব ভার্চুয়াল।’’ মদন জানান, তিনিও সিবিআইকে প্রশ্ন করেছেন যে, তাঁর অভিনীত ‘ও লাভলি’ সিনেমা তাঁরা দেখেছেন কি না।
কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে মদনের বক্তব্য কী? তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘আমাদের অফিসে ভিক্ষা করতে এলে এক কেজি চাল, একটু ডাল, মিষ্টি দিই। বাচ্চা এলে তাকে চকোলেট দিই। তাই টেট হোক, গ্রুপ ডি হোক, আমাদের অফিসে যদি কেউ চাকরির খোঁজে আসে, তাঁকে তো ডান্ডা মেরে তাড়াতে পারি না। ফলে অনেকেই এসেছেন। হাজার হাজার আবেদন করেছেন মানে হাজার হাজার চাকরি হয়েছে, এমন তো নয়।’’ তিনি জানান, পুরসভার নিয়োগে তাঁর কোনও হাত নেই। কারণ, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন তিনি জেলে ছিলেন। মদন যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘ধরে নিন, আমাদের অফিসে এক হাজার জনের অ্যাডমিট পাওয়া গেল। তাদের এক জন হয়তো চাকরি পেল। তা হলে কি কোনও ভাবে ধরে নেওয়া যায় যে তাঁর চাকরি টাকা দিয়েই হয়েছে?’’
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের কথা বলতেই কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি বলেন, অয়ন শীলের সঙ্গে মতি শীলের যোগাযোগ ছিল, যিনি রামকৃষ্ণের বন্ধু ছিলেন। তা হলে মতি শীলের বাড়িতেও রেইড হোক।’’ পর ক্ষণেই তৃণমূল বিধায়কের সংযোজন, ‘‘আমি মদন মিত্র। বুকের পাটা ফুলিয়ে বলছি, ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব। কিন্তু তাতে যদি কেউ এক ইঞ্চি দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে, ধরতে হবে না। আমি নিজে গলায় দড়ি দিয়ে গঙ্গায় লাফ দেব।’’