তপসিয়া এলাকায় একটি বেআইনি বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
তিলজলা ও কসবা এলাকায় যে ঢালাও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে তা স্বীকার করে নিলেন কসবার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান। তাঁর অভিযোগ, কলকাতা জুড়েই বেআইনি নির্মাণ চলছে। তাই তাঁর বিধানসভা এলাকাকে আলাদা করে দেখা ঠিক নয়।
জাভেদ বলেন, ‘‘শুধু কসবা-তিলজলায় নয়, সারা কলকাতা জুড়েই বেআইনি নির্মাণ চলছে। বেহালা, যাদবপুর, গার্ডেনরিচ থেকে উত্তর, পূর্ব এবং মধ্য কলকাতাতেও।’’
মন্ত্রীর এই মন্তব্যে প্রবল অস্বস্তিতে পুর প্রশাসন। সম্প্রতি কড়েয়া থানা এলাকায় প্রোমোটারি সংক্রান্ত গণ্ডগোলের জেরে এক যুবকের খুন হওয়ার ঘটনায় ফের সামনে এসেছে সেই পুরনো প্রশ্ন: বেআইনি নির্মাণ কেন বন্ধ করতে পারছে না পুরসভা? পুরসভার বিল্ডিং দফতরের দায়িত্বে খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বেআইনি বাড়ি ভাঙছি। আরও ভাঙব।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে পুর ভবনে পুর বোর্ডের এক কর্তার ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা। সেই শীর্ষ কর্তাকে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে বেআইনি বাড়ি হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মারার ভয় দেখাচ্ছে। কিছু ব্যবস্থা করুন।’’ ওই কর্তা প্রশ্ন করেন, ‘‘কোথায় থাকেন?’’ জবাব আসে, ‘‘কসবায়।’’ সব শুনে ওই পুর কর্তা বলেন, ‘‘আপনার বাড়ির ছাদে উঠে দেখবেন তো, ওখানে ক’টা বৈধ বাড়ি হচ্ছে!’’ জবাব শুনে ঘাবড়ে যান মহিলা। পরে তাঁকে বলা হয়, ‘‘আপনি ফিরে যান। পুর প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’’
কসবা এলাকা যে এখন বেআইনি নির্মাণের স্বর্গরাজ্য, তা বোঝাতেই কথাগুলি বলেছিলেন ওই পুর কর্তা। পুরসভা সূত্রের খবর, তপসিয়া রোডে পাওয়ার হাউসের কাছে বেআইনি ভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে একটি ছ’তলা বাড়ি। পিকনিক গার্ডেন রোডেও আধা তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে আরও একটি ছ’তলা নির্মাণ। বেশির ভাগই ৬৬ এবং ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে। পুরসভার তথ্য বলছে, এর সব ক’টিই বেআইনি। বাড়ি তুলতে অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাটও চলছে বলে অভিযোগ।
বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোন এলাকার কোন ঠিকানায় বেআইনি নির্মাণ চলছে, তা আমরা জানতে পারি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কিছু করতে পারি না।’’ কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। কোথাও বা প্রভাবশালীদের নির্দেশে কাজ বন্ধ করতে হয়। যাঁরা ভাঙতে যাচ্ছেন, তাঁদের হেনস্থা করা হয়।’’ শুধু তিলজলা, কসবাতেই ২৩টি অবৈধ বাড়ির হদিস দিয়েছে পুরসভা।
বিল্ডিং দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এলাকায় বেআইনি বাড়ি হলে পড়শিরাই অভিযোগ জানান। কিন্তু সেই সমস্ত নির্মাণের বিরুদ্ধে সহজে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ, পিছনে রাজনৈতিক দাদাদের সমর্থন থাকে। পুর বোর্ডের এক কর্তার অভিযোগ, ওই এলাকায় অবৈধ নির্মাণের পিছনে শাসক দলেরই এক বিধায়কের হাত রয়েছে। তাঁর মদতেই বেআইনি বাড়ি বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরসভার এক শ্রেণির কর্মী এবং ইঞ্জিনিয়ারেরাও উপরির লোভে বেআইনি নির্মাণে মদত দেন বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের বিধায়ক ও মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানের ছেলে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। পাশের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডও শাসক দলের। বেআইনি নির্মাণের প্রসঙ্গে জাভেদের জবাব, ‘‘আগে ১০০-২০০ বেআইনি বাড়ি ছিল, এখন তো শহরে হাজার হাজার বেআইনি বাড়ি।’’ তাঁর অভিযোগ, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জানালেও পুরসভা ব্যবস্থা নেয় না। জাভেদের প্রশ্ন, ‘‘ওঁদেরই জিজ্ঞাসা করুন, কেন ওঁরা নীরব? কড়া পদক্ষেপ করতে হলে সব জায়গায় করুক। প্রয়োজনে ৬৬ বা ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডেও।’’