Kunal Ghosh in SLST Dharna Mancha

জুতো উড়ে এল কুণালের দিকে! তার পরেও ধর্নামঞ্চে উঠলেন, বললেন, ‘সরকার ভুল করলে প্রায়শ্চিত্ত হবে’

শনিবার আন্দোলনের ১০০০তম দিনে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন এক মহিলা চাকরিপ্রার্থী। তার পরেই তিনি ধর্নামঞ্চে আসার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। জানান, আলোচনার পথ খোলা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৭
Share:

কুণাল ঘোষ এবং এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থী রাসমণি মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

আন্দোলনের ১০০০তম দিনে ধর্নামঞ্চে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন এক এসএলএসটি মহিলা চাকরিপ্রার্থী। কান্নায় ভেঙে পড়া অবস্থায় তাঁর আবেদন ছিল, অবিলম্বে তাঁর মতো চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হোক। তাঁদের কথা শুনুক রাজ্য সরকার। ওই মহিলাকে দেখতেই শাসকদলের তরফে কুণাল ঘোষ ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হতেই উঠল ‘চোর-চোর’ স্লোগান। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের অন্যতম মুখপাত্রের দিকে এক পাটি জুতোও উড়ে এল। যদিও তার পরেও কুণাল দেখা করলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা থেকেই সমাধানের পথ আসে। আন্দোলন তো পালিয়ে যাচ্ছে না। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে।’’

Advertisement

এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। ১০০০তম দিনে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিজেপি এবং বাম নেতৃত্ব তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। বিকেলে ওই মঞ্চে উপস্থিত হন কুণাল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হুলস্থুল পরিস্থিতি। চাকরিপ্রার্থী, বিরোধী নেতৃত্ব এবং পুলিশের ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে যান তৃণমূল নেতা কুণাল। বেশ কিছু ক্ষণ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। যদিও পরে তিনি বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে। কুণাল জানান, আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবহিত। এ নিয়ে আলোচনার পথ খোলা আছে। আগামী সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় কুণাল ঘোষ। ছবি: সৌরভ পাল।

অন্য দিকে, শাসকদলের তরফে কুণালের উপস্থিতি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর খুশি চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করার পর কুণাল বলেন, ‘‘কোনও একটি জটিলতার জন্য এই চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি আটকে আছে। আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রী, সবাই চান আশু সমাধান। এর আগে অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) তো বৈঠক করে বলটাকে রোল (গড়িয়ে) করে দিয়েছিলেন।’’ এর পর কুণাল জানান যে চাকরিপ্রার্থী তাঁর মাথা কামিয়ে ফেলেছেন, তাঁকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। তাঁর সঙ্গে একাধিক বার তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। ছেলেকে কোলে নিয়ে ওই চাকরিপ্রার্থীর আন্দোলনকে তিনি সম্মান করেন। তাঁর এই মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি দেখা করতে এসেছেন। কুণালের কথায়, ‘‘কার কথায় মাথা কামালেন, দেখতে এসেছি।’’ অন্য দিকে, এই আন্দোলন এবং চাকরিপ্রার্থীর মাথা কামানো নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ‘নাটক’ বলেন। কুণাল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা সৌগত-প্রসঙ্গও তোলেন।

Advertisement

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘নিয়োগ নিয়ে জট খুলুক। আজ যখন রাসমণি চুল বিসর্জন দিচ্ছেন, তখন মনে হয়েছে অফিসে কথা না বলে ওঁদের সঙ্গে এসে দেখা করে যাই।’’ বস্তুত, কুণালের সঙ্গে রাসমণি এবং অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীকে বেশ কিছু ক্ষণ বসে কথা বলতে দেখা যায়। কথাবার্তার পর কুণাল বলেন, ‘‘জট খুলছে। তবে একটা আঁকশিতে এসে আটকে রয়েছে। সোমবার বিকেলে তাই আলোচনা করার কথা বলেছি।’’ তৃণমূল মুখপাত্রের সংযোজন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন স্লোগান দিয়ে চাকরি পাবেন, তা করতেই পারেন। গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার আছে। আর সরকারের তরফে কোনও ভুল থাকলে সরকারের তরফেই তার প্রায়শ্চিত্ত হবে।’’

ওই চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। এবং এসএমএসের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন করেছিলেন তাঁরা। তখন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তাঁরা চাকরি পাননি— এই অভিযোগে আবার অনশনে বসেন কয়েকশো যুবক-যুবতী। ২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না দেন তাঁরা। তার পর গত ১০০০ দিবারাত্রি কেটেছে রাস্তায়। কিন্তু চাকরি হয়নি। শনিবার সেই ধর্নামঞ্চে হাজির হন শাসক-বিরোধী দুই পক্ষের নেতারা। একে সদর্থক ভাবেই দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement