কবীর সুমনের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া উচিত, দাবি কুণালের। অলংকরণ: শৌভিক দেবনাথ।
একটি বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে এক পুরুষকণ্ঠের ফোনালাপের রেকর্ডিং ঘিরে আপাতত সরগরম রাজ্য। সেই কণ্ঠের বাচনভঙ্গি এবং স্বর সুমনের সঙ্গে মেলে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন সেই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি। এ বার এই ঘটনা নিয়ে নিজের অবস্থান জানালেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সঙ্গীতশিল্পী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমনের নাম করে টুইটে কুণাল লেখেন, ‘যে অডিয়োটি ঘুরছে, সেটি যদি কবীর সুমনেরই হয়, তা হলে তা অতি আপত্তিকর এবং তীব্র প্রতিবাদযোগ্য। এর জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত, না চাইলে ব্যবস্থা হওয়া উচিত। জনপ্রিয় গায়ক বা প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী হলেই এ সব বলা যাবে, এটা হতে পারে না।’
ঘটনাচক্রে, শনিবার সকালে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সুমন। লেখেন, তিনি যা করেছেন, তা দরকার হলেই আবার করবেন। পাশাপাশি লিখেছেন, ‘ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে স্বাভাবিক ভাবেই আমি আক্রান্ত। এটাই হওয়ার কথা। আরও হবে। আমার যায়-আসে না। যা করেছি তা, দরকার হলেই, আবার করব।’ সুমনের শনিবারের ফেসবুক পোস্ট বলছে, ফোনের ওই কণ্ঠ তাঁরই ছিল। যদিও সুমন ফোনালাপের প্রসঙ্গ তাঁর পোস্টে লেখেননি। পোস্টটি ‘পাবলিক’ও করা হয়নি। করা হয়েছে ফেসবুকের ‘ওনলি ফ্রেন্ডস’ বিভাগে। অর্থাৎ, যাঁরা সুমনের বন্ধুর তালিকায় রয়েছেন, তাঁরাই ওই পোস্টটি দেখতে পাবেন।
সুমন আরও লিখেছেন, ‘আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেন, কিছুর পক্ষে যুক্তি দিতে যেও না। তোমার বন্ধুদের তা দরকার পড়বে না। তোমার শত্রুরা তা বিশ্বাস করবে না। সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, শিল্পীর কোনও আলাদা স্বাধীনতা থাকতে পারে বলে মনে করি না। যে কোনও মানুষের যে অধিকার, তাদের অধিকার ততটাই। একটি বিশেষ চ্যানেল ও তার সাংবাদিকরা দিনের পর দিন যা করে যাচ্ছে, তার জবাব দিয়েছি উপযুক্ত ভাষায়। সুরসম্রাজ্ঞীর অপমানের বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক বৈঠক হয়েছিল সেখানে কোন চ্যানেলের কোন সাংবাদিক কী করেছে, বলেছে আমি ভুলিনি।’
তার পরে সুমন লিখেছেন, ‘সারা দুনিয়ায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা তাদের ইচ্ছেমতো পথে চলে। যে কোনও উপায় নেয়। যার হাতে চ্যানেল-কাগজ কিছু নেই, সে-ও তার ইচ্ছেমতো উপায় নেবে। এ বিষয়ে যাঁদের আগ্রহ, জার্মান কাহিনিকার হাইনরিশ্ ব্যোল্ (Heinrich Boell)-এর লেখা The Lost Honour of Katharina Blum উপন্যাসটি পড়ুন। বইটি পড়া দরকার। এক প্রাক্তন সাংবাদিক ও নিয়মিত পাঠক হিসেবে বলছি।’
এই প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, কুণাল লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় গায়ক বা প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী হলেই এ সব বলা যাবে, এটা হতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে ওই ফোনালাপ ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর শুক্রবার রাতে কবি শ্রীজাত ওই বিষয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। যাতে তিনি জানান, শিল্প আর শিল্পীর স্বাধীনতার আড়ালে যে যা খুশি করতে পারেন না। শ্রীজাত উল্লেখ করেন সুমনেরই একটি গানের লাইন— ‘বিরোধীকে বলতে দাও।’
কী ছিল ওই ফোনালাপে, যা নিয়ে এত বিতর্ক?
ভাইরাল হওয়া ওই ফোনালাপে ছাপার অযোগ্য বিভিন্ন কটূক্তি ছিল। সেই কণ্ঠ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে বলেছিল, যেন ওই কথা ‘ব্রডকাস্ট’ করা হয়। এমন অভিযোগও ছিল যে, ওই চ্যানেল (অথবা আপাতদৃষ্টিতে তাদের কর্তারা, ওই কণ্ঠের অভিযোগ, আরএসএস) প্রবীণ গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে মেরে ফেলছে! যে অভিযোগ সুমন-সহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল সন্ধ্যার মতো প্রবীণ গায়িকাকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব দিতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অন্যায় করেছে। নবতিপর গায়িকা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। ঘটনাচক্রে, তার পরেই সন্ধ্যা কোভিডে আক্রান্ত হন। তিনি আপাতত শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।