জয়ের উচ্ছ্বাস। ছবি পিটিআই।
অভিষেক ইনিংসেই এক জন ব্যাট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। রান তুলেছেন দলের সকলের চেয়ে বেশি। অন্য জন সামান্য পিছিয়ে। দু’জনের ঝোড়ো ইনিংসেই ভোটের পরিমাণ পেরিয়েছে বিশ হাজারের গণ্ডি। রেকর্ড গড়া দুই ‘খেলোয়াড়কে’ নিয়েই সোমবার দুপুরের পর থেকে চলছে আলোচনা।
এক জন বিধাননগরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী আরাত্রিকা ভট্টাচার্য। যিনি প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা রাজারহাট-নিউ টাউন কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে। যাঁর জয়ের ব্যবধান ১০৩৪২। তিনি ভোট পেয়েছেন ১০৬১০টি।
আরাত্রিকার গায়ে গায়ে রয়েছেন চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা পূর্বতন বোর্ডের বরো চেয়ারম্যান শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল (ডাম্পি)। তাঁর জয়ের ব্যবধান ১০২০০। তিনি ভোট পেয়েছেন ১০৭২০টি। এঁদের পিছনে রয়েছেন দু’নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রহিমা বিবি মণ্ডল। তাঁর জয়ের ব্যবধান ৯৪১৭। ভোট পেয়েছেন ৯৭৬৯টি।
এই সমস্ত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫ হাজার। তাই জয়ের বিপুল ব্যবধান নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়ে উন্নয়নের যুক্তিকেই তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আরাত্রিকা, ডাম্পিদের দাবি, ‘‘যা কাজ হয়েছে এবং করোনার সময়ে কর্মীরা যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে মানুষ দু’হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছেন।’’ রাজারহাট-গোপালপুরের নেতা তথা সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দেবরাজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ব্যবধান নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, জানি না। ওয়ার্ডে প্রচুর ভোটার। মানুষ বিরোধীদের উপরে ভরসা রাখেননি। আমি যে ক’টি ওয়ার্ড দেখেছি, কোথাও বিরোধী এজেন্টরা বসতে পারেনি, এমনটা ঘটেনি।’’ দেবরাজের জয়ের ব্যবধান ৫৬৬৭।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণের একটা ছবি দেখা যায়। সেই কারণেই শাসকদল কোনও ওয়ার্ডে ৯৬ শতাংশ ভোট পায়। তিনি বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকে কলকাতা পুরভোটে বামেরা এক ও দুই নম্বর ওয়ার্ডে ৭৬ থেকে ৮২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ঘাটালে পেয়েছিল ৮৭ শতাংশ। সেই রেকর্ডও ছাপিয়ে গিয়েছে। এই ফলাফল দেখাল, যাঁরা ছাপ্পা দিয়েছিলেন, তাঁরা হিসেবের তোয়াক্কা করেননি।’’
তথ্য বলছে, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে চামেলি নস্কর ৮১৪৮ ভোটে এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবীর সর্দার ৭৭৩৭ ভোটে জিতেছেন। বিধাননগরের প্রাক্তন দুই মেয়র, সব্যসাচী দত্ত ৪৬৩৪ ভোটে এবং কৃষ্ণা চক্রবর্তী ২২৫৯ ভোটে জিতেছেন।
সিপিএম নেতা পলাশ দাশ বলেন, ‘‘কী পরিমাণ ছাপ্পা হলে এই ব্যবধান হতে পারে, ভাবুন! তিন নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থী ২০০ এবং চার নম্বর ওয়ার্ডে ৫০০-র কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের দিন এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ১৬৬টি অভিযোগ আমরা দায়ের করেছিলাম।’’
বিজেপির কলকাতা উত্তর শহরতলির জেলা সম্পাদক স্বপন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘প্রশাসন তৃণমূলের ক্যাডারের কাজ করেছে। বিরোধী এজেন্টদের বুথে বসিয়ে রাখা হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের নজর এড়াতে। বিভিন্ন ভাবে শাসানিও দিয়ে রাখা হয়েছিল। তাঁরা বসে বসে চোখের সামনে সব দেখতে বাধ্য হয়েছেন।’’
বিধাননগর যে বারাসত সংসদীয় জেলার অধীনে, সেখানকার সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় জয়ের ব্যবধান প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া। অন্য ভাবে দেখা উচিত নয়।’’