কলকাতা তো দূরস্থান, গোটা দেশে সে সময়ে ক’টি বুটিক ছিল, তা হয়তো হাতে গুনে বলা যেত। চল্লিশ বছর আগের সেই সময়ে শহরে স্টাইল এবং ফ্যাশনের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছিল যে বিপণি, তার নাম ‘আনন্দ’। বাংলার নিজস্ব এমনকী, লুপ্তপ্রায় কিছু শিল্পকে গোটা দেশের সামনে নতুন করে তুলে ধরতে ‘আনন্দ’-র ডিজাইনে প্রাধান্য পেল ফুলিয়া-ধনেখালির অতি জনপ্রিয় তাঁত শিল্প। পুরনোকে নতুন বুনোটে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার ফলে শহরের তৎকালীন ‘এলিট’-দের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠল ‘আনন্দ টাঙাইল’। বাংলার হ্যান্ডলুমের অতিপরিচিত তাঁতকে নতুন মাত্রা দিল অপ্রচলিত কিছু রং আর সুতোর ব্যবহার। রকমারি সুতো আর তার বুনন নিয়ে আনন্দের ডিজাইনারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে তৈরি হল ‘আনন্দ সিল্ক’ও। শাড়ির রং থেকে মোটিফ, সবেতেই এল বিপ্লব। বাঙালি শাড়িতেই আধুনিকতার স্টেটমেন্ট তৈরি হল এই বুটিকের হাত ধরে।
১৯৭৪ থেকে শুরু করে এই দীর্ঘ পথ চলার মাঝে আনন্দ কখনও সাজিয়ে তুলেছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর ওয়ার্ড্রোব তো কখনও তা মন কেড়েছে নার্গিস, হেমা মালিনী, রাখীর মতো বলিউডের তারকাদের। উত্তমকুমারও ফ্যান ছিলেন! সেখানকার ধুতি ছিল মহানায়কের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
এই চল্লিশ বছরে রোজই একটু একটু করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে আনন্দ। দেশের সব বড় শহরেই প্রশংসিত হয়েছে এখানকার অভিনব সব তাঁত ও সিল্কের শাড়ির প্রদর্শনী। দেশ-বিদেশের শাড়ি-প্রেমীদের কাছে এই বুটিকের তাঁত, কাঞ্জিভরম, শিফন, ক্রেপ এখন সর্বত্রই অতি জনপ্রিয়। আর নিজের শহর কলকাতার কাছে তো জন্মলগ্ন থেকেই ‘স্টাইল’-এর আর এক নাম আনন্দ!
কাল, শুক্রবার আনন্দের চল্লিশ বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হবে গ্র্যান্ড হোটেলে এক ফ্যাশন শো-এর মাধ্যমে। শাড়িতে নানা ধরনের প্রিন্ট আর উইভ প্রদর্শিত হবে সেই র্যাম্পে।