ধর্মতলা মোড়। —ফাইল চিত্র।
আগামী কয়েক বছরে মেট্রোর মালায় জুড়বে কলকাতা শহর এবং শহরতলি। ইতিমধ্যেই একের পর এক মেট্রো স্টেশন তৈরি হতে শুরু করেছে শহরের নানা এলাকায়। কিন্তু এসপ্ল্যানেড এমন একটি এলাকা, যেখানে আগামী দিনে সহাবস্থান করবে তিনটি মেট্রো স্টেশন। সেই তিনটি মেট্রো স্টেশন একযোগে কাজ করা শুরু করলে এলাকার যানজট অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে পরিবহণ দফতর। তাই এখন থেকেই এসপ্ল্যানেড এলাকাকে যানজট মুক্ত রাখতে উদ্যোগী হলেন পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন। সোমবার তিনি এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রে-কে। তিনটি স্টেশন একযোগে কাজ করা শুরু করলে এসপ্ল্যানেড এলাকায় কী কী অসুবিধা হতে পারে, সেই চিঠিতে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ধর্মতলা বা এসপ্ল্যানেডের অবস্থান। বর্তমানে সেখানে রয়েছে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন। আগামী এক বছরের মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অধীন নতুন একটি এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন কাজ করা শুরু করবে। আবার জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের একটি স্টেশনও তৈরি হবে এই এসপ্ল্যানেডেই। এই মেট্রো স্টেশনটি তৈরির জন্য আবার কলকাতা পুরসভার বিধান মার্কেটটি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবহণ সচিব নিজের চিঠিতে এই তিনটি স্টেশনের কথা উল্লেখ করে যানজটের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই মেট্রো কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের চলাচল, যানবাহনের যানজটের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সমীক্ষা করে তার মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কেন এখন থেকেই ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতে হবে, তার ব্যাখ্যাও চিঠিতে স্পষ্ট করেছেন পরিবহণ সচিব। এসপ্ল্যানেড এলাকার ময়দান চত্বরের উত্তর অংশকে কলকাতা শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটকদের জন্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং ইডেন গার্ডেন্সের মতো যে সব দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তার কথাও উল্লেখ করেছেন পরিবহণ সচিব। এ ছাড়াও ফোর্ট উইলিয়াম এবং শহিদ মিনারের গুরুত্ব মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। কাছাকাছি থাকা ডালহৌসি স্কোয়্যারে ব্রিটিশ জমানার যে সমস্ত আবাসন রয়েছে, সেইগুলিও যে ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই এলাকার, তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এই এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম, কলকাতা হাই কোর্ট, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং রাজভবন ইত্যাদি। এই অঞ্চলের কাছেই রয়েছে গঙ্গা নদীও। রয়েছে ট্রাম ও বাস ডিপো। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গে যাওয়ার সরকারি বাসের ডিপোও এই চত্বরে। এই সব জায়গাগুলিকে ঘিরে এমনিতেই এসপ্ল্যানেড এলাকায় যানজট-সহ জনসমাগম হয়। নতুন করে একসঙ্গে তিনটি মেট্রো স্টেশন কাজ করা শুরু করলে এসপ্ল্যানেড এলাকা কার্যত হয়ে উঠবে ‘ট্রান্সপোর্ট হাব’। আগামী দিনে যানজটের জাঁতাকলে পড়ে এমন একটি বাণিজ্যিক, ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময় শহর যাতে কোনও ভাবেই নষ্ট না হয়, সে দিকে নজর দিতে কলকাতা মেট্রো জেনারেল ম্যানেজারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা রাইটস। সেই রিপোর্টটি নিজের চিঠির শেষ অংশে উল্লেখ করেছেন পরিবহণ সচিব। দু’পাতার এই চিঠিটির সঙ্গে রাইটসের সেই রিপোর্টটি যুক্ত করে মেট্রো রেলের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘আশা করছি আমার এই চিঠিটির পর আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।’’ চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দফতরে। এ ছাড়াও চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিব, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, পুর ও নগরোন্নয়ন সচিব, কলকাতা পুরসভার কমিশনার ও পূর্ত দফতরের সচিবকে।