মানে না মানা: শহরের বিভিন্ন বাজারে এখনও রমরমিয়ে চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার। ছবি: সুমন বল্লভ।
আইন রয়েছে খাতায়কলমে। তবে, বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই।
২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে দেশে এক বার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০২২-এর ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহারও সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। গত বছরের পয়লা জুলাই থেকে এ রাজ্যেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। কিন্তু আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে এক সমীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশেষত, শহর কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে ভাবে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে, তাতে উদ্বিগ্ন অনেকেই।
‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এয়ার অ্যান্ড ওয়াটার’ (আইএসডব্লিউএমএডব্লিউ)-এর উদ্যোগে ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের পুনর্ব্যবহার নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সোমবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেন অধ্যাপক ও গবেষক সাধনকুমার ঘোষ। তাতে দেখা গিয়েছে যে, কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য মারাত্মক ভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ড ধরে উত্তর ও দক্ষিণে পৃথক পৃথক ভাবে প্লাস্টিক দূষণের সমীক্ষা হয়েছে। ওই রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণের ৪৭ শতাংশ এবং উত্তরের ৫৩ শতাংশ রেস্তরাঁয় ঠান্ডা পানীয় পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত হয় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের স্ট্র। প্লাস্টিকের কাঁটা চামচ, চামচ, ছুরি, ট্রে ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করছে খাবার সরবরাহকারী সংস্থা, রেস্তরাঁ, রাস্তার ধারের খাবারের দোকানগুলি। এগুলি যে নিষিদ্ধ, সে বিষয়েও তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণের ৫১ শতাংশ এবং উত্তরের ৪৯ শতাংশ রেস্তরাঁতেই প্লাস্টিক সংক্রান্ত নিয়ম মানা হচ্ছে না।
তবে ১২০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারে দক্ষিণকে (৪১ শতাংশ) টেক্কা দিয়েছে উত্তর (৫৯ শতাংশ)। আবার ক্যারিব্যাগের গায়ে যে প্লাস্টিকের ঘনত্ব (কত মাইক্রন) লিখে রাখার নিয়ম রয়েছে, তা-ও ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে না।
নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের দেদার ব্যবহার প্রসঙ্গে এ দিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এই ধরনের নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ঠেকাতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শীঘ্রই প্লাস্টিকের কারখানার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে। নিয়ম না মানলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। ১ জুলাই থেকে নিউ আলিপুর বাজারে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে।’’
একই সঙ্গে কলকাতার আবহাওয়া বদলের মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করবে পুরসভা। এ দিন এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান ফিরহাদ। পুরসভা জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে ছ’মাসের মধ্যে এই পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করা হবে। সূত্রের খবর, শহরে জল জমা, শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র রক্ষা ইত্যাদি বিষয় ওই পরিকল্পনার অন্তর্গত হবে। প্রসঙ্গত, জলবায়ু বদলের নিরিখে কলকাতা যে বিপজ্জনক অবস্থায় আছে, তা একাধিক রিপোর্টে বার বার উঠে এসেছে। মেয়রের বক্তব্য, কলকাতায় বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু বদলের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ আছে। তাই দ্রুত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তার বাস্তবায়ন জরুরি। প্রকৃতির ক্ষতি না করে যাতে উন্নয়ন হতে পারে, তা-ও এই পরিকল্পনার অন্তর্গত হবে।