ধৃত: (বাঁ দিক থেকে) জগন্নাথ ভৌমিক, ভিক্টর দে এবং বিশ্বনাথ সাঁই। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়েই খুন করা হয়েছে মানিকতলা মেন রোডের বসাকবাগান এলাকার বাসিন্দা অমরনাথ প্রসাদ ওরফে পাপ্পু নামের যুবককে। বাতিস্তম্ভে বেঁধে রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অত্যাচার চালিয়েছিল মোট ১৪ জন! এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার রাতে তিন জনের গ্রেফতারির পরে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ধৃতদের নাম জগন্নাথ ভৌমিক ওরফে ভিকি, বিশ্বনাথ সাঁই ওরফে বান্টি এবং ভিক্টর দে। তাদের মধ্যে জগন্নাথ কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিযোগ, সে-ই বাকিদের বুঝিয়েছিল, থানায় দিলে ছাড়া পেয়ে যাবে। তাই ‘বিচার’ তাদেরই করতে হবে।
গত কয়েক মাসে একাধিক অপরাধে সিভিক ভলান্টিয়ার বা হোমগার্ডদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে সিভিক ভলান্টিয়ার বা হোমগার্ডরা নিজের গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকার ব্যবহার করতে পারবেন না বলে নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি, বহু অভিযোগ পেয়ে সিভিক ভলান্টিয়াররা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে পারবেন না বলেও নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এর পরেও এই ঘটনায় অবাক পুলিশেরই একটি বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া স্রেফ পুলিশের সঙ্গে কাজ করার জন্যই কি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা? নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাও কি সেই কারণেই?
গত বুধবার বসাকবাগান এলাকায় একটি অটো থেকে উদ্ধার হয় বছর পঁয়ত্রিশের পাপ্পুর দেহ। পুলিশ জানায়, তাঁর পায়ে ও মুখে চোট ছিল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হওয়া ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তাঁকে মারধরের প্রমাণ মেলে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পাশেই গাঙ্গুলিপাড়া এলাকায় আগের রাতে এক যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পরে আধমরা অবস্থায় তাঁকে কোথাও ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে। সেই যুবকই পাপ্পু কি না, খোঁজ শুরু হয়।
ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েক জন বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পাড়ায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ উঠেছে। তবে জানা যায়, ওই রাতে পাপ্পু ছাড়া অন্য এক যুবককে মারধর করা হয়েছিল। তিনিই তিনিই পুলিশকে গোটা ঘটনা জানান। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিভিক ভলান্টিয়ার জগন্নাথ, বিশ্বনাথ এবং ভিক্টরকে চিহ্নিত করে। পুলিশের এক কর্তা জানান, জেরায় ধৃতেরা অপরাধ কবুল করেছে। বাকি জড়িতদের নামও জানিয়েছে তারা। দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বাকিদেরও। ধৃতদের রবিবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জগন্নাথ প্রায় তিন বছর ধরে এন্টালি থানার দুই ট্র্যাফিক সার্জেন্টের সহকারী হিসেবে কাজ করে। বান্টি তেমন কোনও কাজ না করলেও ভিক্টর গাড়ি চালায়। ভিক্টরের মা জয়া দে বলেন, ‘‘ভিকিই ছেলেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন দুটো ছেলেকে চোর সন্দেহে বেঁধে পেটানো হচ্ছিল। ভিকি এসে বলে, দিন কয়েক আগেই ওর ঘর থেকে ফোন চুরি হয়েছে। কিন্তু ওই দু’জনই যে চোর, তার প্রমাণ ছিল না। এমন মারল যে ছেলেটা মরে গেল!’’ তাঁর দাবি, ‘‘ভিকি পুলিশ পরিচয়ে দাদাগিরি করে। ছেলেকে ডেকে নিয়ে মদের আসর বসাত। ও না ডাকলে ছেলে ওই রাতে যেত না।’’ জগন্নাথের পরিবারের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। পাপ্পুর বড় দাদা মহেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘ধৃতদের এক জন থানায় কাজ করে শুনেছি। থানায় কাজ করে বলে কি এ ভাবে পিটিয়ে মারতে পারে? আমরা বিচার চাই।’’