এক মামলায় তিন বার তদন্তকারী অফিসার ‘বদল’

সম্প্রতি টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে বহিরাগতদের তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৮
Share:

মানিকতলা থানা।—ফাইল চিত্র।

এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ২৩ দিনে মানিকতলা থানার বিরুদ্ধে তিন জন তদন্তকারী অফিসার বদল করার অভিযোগ উঠল। অভিযোগটি করেছে খোদ আক্রান্তের পরিবার। গত ১৩ অগস্ট মানিকতলা থানার বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের (ইএসডি) ডিসির দফতরে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ করে আক্রান্তের পরিবার। এর পরেই দ্বিতীয় তদন্তকারী অফিসারকেও বদলে ফেলা হয় বলে ওই পরিবারের দাবি। এই সুযোগে অভিযুক্তেরা এখন তাঁদের বাড়িতে গিয়ে মামলা তোলার জন্য নানা ভাবে চাপ দিচ্ছেন বলে আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগ।

Advertisement

সম্প্রতি টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে বহিরাগতদের তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা এবং যাঁদের ধরায় সেই রাতে হামলা হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও লঘু ধারায় মামলা করে থানা থেকেই জামিন দিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশকর্মীদের একাংশের যোগ্যতা নিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নিছক একটি মারধরের ঘটনায় মানিকতলা থানার তদন্তকারী অফিসার বারবার বদলের অভিযোগ সেই প্রশ্নকেই আরও জোরদার করছে বলে পুলিশেরই একাংশের মত। যদিও ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস বলেন, ‘‘কোনও তদন্তকারী অফিসার বদল হয়নি। অভিযুক্তদের ধরতে লাগাতার তল্লাশি চলছে।’’ মানিকতলা থানার ওসি-ও বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের দ্রুত ধরতে অন্য অফিসারদেরও বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল মাত্র।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, যে কোনও মামলার তদন্তকারী অফিসার বদলের নির্দেশ দিতে পারে আদালত। তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ ও তাঁকে বদল করা পুরোপুরি এক জন ওসি-র ইচ্ছাধীন।

ডিসির দফতরে দায়ের করা অভিযোগে আক্রান্তের স্ত্রী রিমা সামন্ত জানিয়েছেন, মানিকতলার সাতকড়ি মিত্র লেনে তাঁদের একটি বিরিয়ানির দোকান রয়েছে। গত ২৫ জুলাই রাতে দোকানে ছিলেন তাঁর স্বামী সুদীপ। তখন সেখানে বিরিয়ানি কিনতে হাজির হন তিন যুবক। পাঁচ প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে তাঁরা দাম না মিটিয়েই চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে সুদীপকে ধরে ওই যুবকেরা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ রিমাদেবীর। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামীকে টেনে নিয়ে গিয়ে এমন মেরেছে যে ডান হাত ভেঙে গিয়েছে। পিঠেও গুরুতর চোট লেগেছে। শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালে ওঁকে ভর্তি করিয়েছি আমরা। হাতটা এমন ভাবে ভেঙেছে যে, অস্ত্রোপচার করে প্লেটও বসানোও যাচ্ছিল না। বুকের এক্স-রে তে হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ এসেছে।’’

Advertisement

রিমাদেবীর দাবি, তাঁদের দোকানে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। তাতে ওই রাতের ছবি ধরা পড়েছে। মানিকতলা থানার হাতে ফুটেজ তুলে দেওয়ার পরেও পুলিশ সে ভাবে সক্রিয় হয়নি বলে অভিযোগ সুদীপবাবুর পরিবারের। রিমাদেবী বলেন, ‘‘গত ৫ অগস্ট সুদীপের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। ২৬ জুলাই অভিযোগ দায়েরের পর থেকে ১০ দিন কেটে গেলেও তখনও পুলিশ কাউকে ধরেনি। ফের আমি থানায় যেতে পরের দিন শুভজিৎ সেনগুপ্ত নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ওই পর্যন্তই। বাকিরা এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে আমাদের চাপ দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই ডিসির কাছে অভিযোগ করেছি।’’

রিমাদেবী আরও বলেন, ‘‘থানায় গিয়ে কিছুই হল না কেন জানতে চাওয়ায় আমার সামনেই এক অফিসারকে ডেকে ওসি বলেন এখন থেকে কেসটা তুমি দেখবে। তাঁকে আগের তদন্তকারী অফিসারের নাম করে তার পরে ওসি বলেন ওঁর থেকে সব কিছু জেনে নাও। তিন বার অফিসার বদলেও কিছু হয়নি। এখনও আর কেউ গ্রেফতার হয়নি।’’

পুলিশ কিছু না করলে এর পর ‘দিদিকে বলো’-ই তাঁদের এক মাত্র পথ বলে জানিয়ে দিয়েছে

সুদীপবাবুর পরিবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement