ATM forgery

এটিএমে কী করছে এত ক্ষণ? ভিতরে ঢুকতেই জানা গেল…

মঙ্গলবার রাত তখন দেড়টা হবে। মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। এলগিন রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে এসে দাঁড়াল তিন যুবক। এ দিক ও দিক দেখে নিয়ে তাদের মধ্যে একজন চট করে ঢুকে পড়ে এটিএমের ভিতরে।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ১২:০৭
Share:

এটিএম থেকে বেরোতেই এই যুবককে জাপটে ধরে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষী। পুলিশের কাজ সহজ হয়ে যায়।—নিজস্ব চিত্র।

কসবার পর এর এলগিন রোড। এটিএমে স্কিমার লাগাতে গিয়ে ধরা পড়ল তিন যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা হল রোহিত কুমার, সাহিল খান এবং সুধীর রঞ্জন। রোহিত ও সাহিল মুম্বইয়ের বাসিন্দা। সুধীর রঞ্জন থাকে উত্তরপ্রদেশে। পুলিশের ধারণা, এরা অনেক দিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছিল এই শহরে। এটিএমগুলিতে রেকিও করে। তার পর অপারেশনে নামে। তবে ধৃতদের জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ২১ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

মঙ্গলবার রাত তখন গভীর রাত। মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। এলগিন রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে এসে দাঁড়াল তিন যুবক। এ দিক ও দিক দেখে নিয়ে তাদের মধ্যে একজন চট করে ঢুকে পড়ে এটিএমের ভিতরে। এটিএম থেকে হাত কয়েক দূরে তখন দাঁড়িয়ে বাকি দুই যুবক। এই এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। কাছাকাছিই ছিলেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পাশেরই একটি জায়গায় আটকে ছিলেন। সেখান থেকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল এটিএম।

নিরাপত্তারক্ষী বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি জানান, ওই যুবক এমন ভাবে ঢুকেছিল যে প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হবে কোনও গ্রাহক। তাই তিনি খুব একটা গা করেননি প্রথমে। কিন্তু নজর ছিল এটিএমের দিকেই।এ দিকে, এটিএমে ঢুকে ওই যুবক পর পর বেশ কয়েক বার টাকা তোলে। তার পর স্কিমার লাগানো শুরু করে। এটিএমে নিখুঁত ভাবে স্কিমার, গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে ফেলেছিল সে। ঠিকঠাক লাগানো হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: গায়েব হওয়া টাকা ফেরাল ব্যাঙ্ক, খুশি গ্রাহকেরা

এলগিন রোডের এই এটিএমেই স্কিমার লাগাচ্ছিল রোহিতরা।

সাধারণত কোনও গ্রাহকের টাকা তুলতে খুব একটা বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী লক্ষ্য করেন, এটিএমের ভিতরে যুবক অনেক ক্ষণ সময় ধরে রয়েছেন। সন্দেহটা জাগে তখনই। এত ক্ষণ ধরে কী করছেন ওই যুবক! কৌতুহল হয় তাঁর। এ বার তিনি এগিয়ে যানএটিএমের দিকে। তিনি দরজা খুলতেই চমকে ওঠে ওই যুবক। সে সময়ই তার পকেট থেকে কিছু যন্ত্রাংশ পড়ে যায়।নিরাপত্তারক্ষীর সন্দেহআরও দৃঢ় হয়। তিনি বুঝতে পারেন এটিএমে কিছু একটা গড়বড় করেছে ওই যুবক। এত ক্ষণ কী করছিল, প্রশ্ন করতেই পাল্টা ওই যুবক তর্ক জুড়ে দেয় নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে। এরই ফাঁকে নিরাপত্তারক্ষী ব্যাঙ্ককে সতর্ক করে দেন। ছেলেটাকে ধরে রেখে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি।

এটিএমের ভিতরে কিছু একটা চলছে, আঁচ পেয়ে ছুটে আসে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবকের দুই সঙ্গী। হুড়মুড়িয়ে এটিএমে ঢুকে পড়ে ওই যুবককে নিরাপত্তারক্ষীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যখন ধস্তাধস্তি ও চেঁচামেচি চলছে, সে সময়ই এটিএমের পাশি দিয়েই যাচ্ছিল পুলিশের টহলদারি ভ্যান। বিষয়টা লক্ষ্য করতেই ভ্যানটি থামে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এটিএমের ভিতরে থাকা সঙ্গীকে ফেলে বাকি দু’জন পালিয়ে যায়। কিন্তু ধরা পড়ে যায় এটিএমের ভিতরে থাকা ওই যুবক।তার কাছ থেকে স্ক্রু ডাইভার-সহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়। এটিএম থেকে উদ্ধার হয় স্কিমার এবং একটি গোপন ক্যামেরা।

আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীর টাকা-গয়না চুরিতে ধৃত ৩

দু’দিন আগেই কসবার বকুলতলায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কেরএটিএম থেকে স্কিমার যন্ত্র উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় স্থানীয় দুই যুবকের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। যদিও ওই দু’জনকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এই দু’টি ঘটনায় একই দল জড়িত কিনা, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু এলগিন রোডের ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বাকি দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement