হাতেকলমে: যাদবপুর বিদ্যাপীঠ স্কুলে সরস্বতী পুজো করার প্রশিক্ষণ চলছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
সরস্বতী পুজোয় কলেজের ছাত্রীদের পুরোহিতের ভূমিকায় দেখা যাওয়াটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ বার স্কুলের ছাত্রীরাও সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকায় নামবে, এমনকি, যজ্ঞও করবে তারা। এই ছাত্রীদের পুজোর কাজ শেখাচ্ছেন তাদেরই স্কুল থেকে সদ্য পাশ করা এক প্রাক্তন ছাত্র।
ছাত্রীদের পুরোহিতের ভূমিকায় নেমে পড়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে এখন রীতিমতো উন্মাদনার পরিবেশ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বললেন, ‘‘দশম শ্রেণির তিন জন এবং নবম শ্রেণির চার জন ছাত্রী এ বার পুজোর সব আচার-অনুষ্ঠানের ভার নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। ওদের মধ্যে দশম শ্রেণির তিন ছাত্রী পুরোহিতের ভূমিকায় পুজো করবে এবং নবম শ্রেণির চার জন ছাত্রী যজ্ঞ করবে। আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র দীপ্তিমান ঘোষ নিজেই বাড়িতে পুজো করে। দীপ্তিমানই ওই সাত জন ছাত্রীকে মন্ত্র পড়া থেকে শুরু করে পুজো করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’’
সম্প্রতি এক দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দীপ্তিমান সাত জন ছাত্রীকে পুজোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। গত বছর ওই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এখন একটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। দীপ্তিমান বললেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। বাবার কাছ থেকেই সরস্বতী পুজো করতে শিখেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি পুরোহিতের কাজ করতে বেশ ভালই লাগে। এ বার কিছু দিন আগে স্কুলে এসেছিলাম। তখনই স্যরেরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমি কয়েক জন ছাত্রীকে পুজো করা শেখাতে পারব কি না। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। পুরোহিতের কাজ ওরা খুব দ্রুত শিখে নিচ্ছে।’’
পুজোর কাজ শেখার ফাঁকেই দশম শ্রেণির ছাত্রী সৃজা সাউ বলল, ‘‘আমরা, মেয়েরা পুজোর আয়োজন করলেও প্রতি বছরই দেখতাম, স্কুলে মূল পুজো, অর্থাৎ পুরোহিতের কাজ ছেলেরাই করছে। এমনকি, পাড়াতেও সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত সব সময়ে পুরুষেরাই হন। এ বার এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন দায়িত্ব পেয়েছি আমরা।’’ সৃজা জানাল, স্যর যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, পুরোহিতের কাজ করতে পারবে কি না, তখন এক কথাতেই রাজি হয়ে যায় সে। তার কথায়, ‘‘পুরোহিতের ভূমিকায় আমি কেমন মন্ত্রপাঠ করব, তা শুনতে আমার বাড়ির লোকজনও আসবেন। আমি সরস্বতী পুজোর মন্ত্র অনেকটাই বলতে পারছি বই না দেখে।’’ নবম শ্রেণির ছাত্রী সুকন্যা মণ্ডল বলল, ‘‘সরস্বতী পুজোয় স্কুলে প্রতি বারই খুব আনন্দ হয়। প্রসাদ বিতরণ থেকে শুরু করে স্কুল সাজানো, নানা ধরনের দায়িত্ব আমাদের উপরে থাকে। সেই আনন্দে দু’-তিন দিন মেতে থাকি। কিন্তু এ বার সেই আনন্দ যেন দ্বিগুণ। আমরা পৌরোহিত্য এবং যজ্ঞ করার দায়িত্ব পেয়েছি। প্রথম দিকে একটু ভয় পাচ্ছিলাম যে, ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারব কি না। এখন বুঝতে পারছি, আমরা খুব ভাল ভাবেই পুরোটা সামলাতে পারব।’’
গোটা স্কুল জুড়ে এখন সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি চলছে। প্রধান শিক্ষক জানালেন, তাঁদের স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র নয় বলে পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে মেয়েরা সব কিছুই ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলো থেকে শুরু করে কুইজ— সবেতেই ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীরাও এগিয়ে চলেছে। তাই মনে হল, পুজোই বা কেন করবে না মেয়েরা? তাই ছাত্রীদের বললাম, এ বার সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত ওরাই হবে।’’