—প্রতীকী চিত্র।
‘বাবার মাথা ভীষণ দামি, হেলমেটেতে ঢাকা। ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা!’ বছর কয়েক আগে পথবিধি সংক্রান্ত সচেতনতায় এমন পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল শহর কলকাতা। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে অলিগলি— সর্বত্র সচেতনতা বাড়াতে কলকাতা পুলিশের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও ফ্লেক্স ছাপিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা সচেতনতার প্রচার করেছে লালবাজার। তবে এ বার সাইবার প্রতারণা আটকাতে ও সচেতনতা বাড়াতে ফ্লেক্সের পাশাপাশি শহরের বিলবোর্ডকে প্রচারের জন্য ব্যবহার করবে কলকাতা পুলিশ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পদ্ধতির রকমফেরে সাইবার অপরাধ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লালবাজারের। কখনও অচেনা নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল, আবার কখনও ঘরে বসে মোটা টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একের পর এক সাইবার প্রতারণার অভিযোগ আসছে শহরে। এমনকি পদ্ধতি পাল্টে কখনও বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার নামেও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন ধরনের সাইবার প্রতারণা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এ বার তাই প্রচারকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিলবোর্ডগুলি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে লালবাজার। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের বিলবোর্ডগুলিকেই এ কাজে ব্যবহার করা হবে। সেখানে সাইবার অপরাধ এড়াতে কী কী করণীয়, সেই বার্তা দেওয়া থাকবে। শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, শিয়ালদহ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিকে এ জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এছাড়া বিভিন্ন শপিং মল সংলগ্ন বিলবোর্ডগুলিও ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, পুলিশের তরফে অপরাধের অভিযোগ এলেই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সাইবার অপরাধ বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তাহলেই অপরাধকে কমানো যাবে বলে তিনি জানান। ওই কর্তার কথায়, ‘‘বিলবোর্ডগুলি আকর্ষণীয়, আকারেও অনেক বড় হয়। তাতে সকলের নজরে পড়ে। ফলে সচেতনতা প্রচারের জন্য এগুলিকে ব্যবহারের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। দ্রুত এগুলিকে কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’
দিন কয়েক আগে একটি বাসকে সাইবার সচেতনতার প্রচারের কাজে ব্যবহার শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ। স্কুলে স্কুলে বাসটিকে নিয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছে। এর পাশাপাশিই থাকছে বিলবোর্ডে প্রচারের ভাবনা। তবে তার পরেও অপরাধের পরিমাণ কমবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা যাচ্ছে না সাইবার বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে যে পদ্ধতিতে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, সেটা পুলিশের নজরে থাকলেও ফের পদ্ধতি পাল্টে অপরাধী কী পথ নেবে, তা তদন্তকারীদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ফলে অপরাধের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সচেতনতার প্রচার তো প্রথম থেকেই চলছে। কিন্তু তাতে সাইবার অপরাধ কমেছে কি? অপরাধের জালকে নষ্ট করতে না পারলে কায়দা পাল্টে পাল্টে এই ধরনের অপরাধ ঘটতেই থাকবে। তবে সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সে ক্ষেত্রে পুলিশের কাজটা অনেকটা সহজ হবে।’’