—প্রতীকী চিত্র।
ব্রেলের মাধ্যমে এত দিন ওঁরা পড়াশোনা করেছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন। এ বার সেই মাধ্যম ব্যবহার করেই ভিনটেজ গাড়ির র্যালিতে অংশগ্রহণ করে চালককে গন্তব্যে পৌঁছনোর নির্দেশ দেবেন দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। আজ, রবিবার ওই র্যালিতে চালকের ঠিক পাশের আসনে বসবেন ওই ছাত্রছাত্রীরা। সকাল ৮টা নাগাদ রবীন্দ্র সরোবরের একটি সাঁতার ক্লাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছ থেকে ওই র্যালি যাবে উড স্ট্রিট পর্যন্ত।
এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন বারাসতের বাসিন্দা, দৃষ্টিহীন দীপ মণ্ডল। রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির ছাত্র দীপ বলেন, ‘‘এটা ভেবেই আমার ভীষণ রোমাঞ্চ লাগছে যে, আমিই গাড়ির চালককে পথনির্দেশ দেব। ব্রেলেই রুট ম্যাপ দেওয়া থাকবে।’’ দীপ জন্ম থেকেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন। তিনি জানান, পড়াশোনা ছাড়াও তিনি সিন্থেসাইজার ও তবলা বাজান। ভবিষ্যতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে চান। ওই অ্যাকাডেমিরই আর এক ছাত্র খোকন কামাত থাকেন রাসবিহারীতে। তিনিও এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। খোকন বলেন, ‘‘ব্রেলের মাধ্যমে চালককে নির্দেশ দিয়ে দৃষ্টিহীনরা গাড়িতে যান, এরকম শুধু শুনেছি।’’ ভবিষ্যতে ইংরেজি অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চান খোকন। দাবা খেলতেও ভালবাসেন। হাওড়া আন্দুলের বাসিন্দা টুম্পা পাল আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘সব জায়গায় নিজেই যাতায়াত করি, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হবে এই প্রথম।’’
এই র্যালির উদ্যোক্তাদের তরফে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুড়ি জন দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রী এই র্যালিতে অংশগ্রহণ করছেন। দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ দিতে পেরে আমাদের খুব ভাল লাগছে। র্যালিতে ১৯৩৫ সালের গাড়িও রয়েছে।’’ যে সংস্থার উদ্যোগে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করছে, তাদের অন্যতম কর্ণধার বিশ্বজিৎ ঘোষ এক সময়ে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ছিলেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি নিজেও দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন ছাত্রেরা পড়াশোনা ছাড়াও নানা বিষয়ে খুব উৎসাহী। চালককে নির্দেশ দিয়ে ওরা গন্তব্যস্থলে ঠিক পৌঁছে যাবে, এ বিষয়ে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী। এর মাধ্যমে একটা শিক্ষাও পাবে।’’