অঞ্জলির মন্ত্রে মনে থাকুক কন্যাও

সবচেয়ে বড় কথা, এ সমাজে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কিংবা ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্প এখনও আমাদের প্রশাসনকে রাখতে হয়। তার কারণ, কন্যাসন্তানের জন্য সেই আদর নেই আমাদের মনে।

Advertisement

অন্বেষা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

শুধু পুত্র নয়। কন্যাও। সাদরে তাকেও চাই। এই বার্তা পৌঁছে দিতে এখনও শিক্ষিত নগর-জীবনকে দু’বার ভাবতে হয়। দেবীপক্ষের আরাধনা নিয়ে এত হইচই, অথচ ভুলে যাওয়া সেই কন্যাকেই। কেন?

Advertisement

সে ভাবনা থেকেই ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এ বার বার্তা দিতে চাইছে, ‘পুত্রান্‌ দেহি’ নয়, বরং অঞ্জলিতে যেন আমরা বলতে পারি ‘সন্তানান্‌ দেহি’। কারণ, আধুনিকতা বা শিক্ষার ছোঁয়া সত্ত্বেও এখনও পুত্রসন্তান নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ এ সমাজের অঙ্গ। এখনও অনেক বাড়িতে প্রথম শিশুটি কন্যাসন্তান হলে ম্লান হয়ে যায় পরিবারের মুখ।

সবচেয়ে বড় কথা, এ সমাজে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কিংবা ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্প এখনও আমাদের প্রশাসনকে রাখতে হয়। তার কারণ, কন্যাসন্তানের জন্য সেই আদর নেই আমাদের মনে। কথাটা মনে করালেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কন্যাসন্তান জন্মের পরে তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এত

Advertisement

রকম আয়োজন করতে হয় আমাদের— সে এখনও আমাদের কাছে ‘সম্পদ’ নয় বলেই।’’ তা ছাড়া শুধু কন্যাই বা কেন? প্রশ্ন তুলছেন অনুত্তমা, ‘‘পুত্রান্‌ দেহি-র বদলে যখন সন্তানান্‌ দেহি বলছি, তখন যেন মাথায় থাকে পুত্র-কন্যার বাইরে অন্য পরিচয়ের কথাটাও। সন্তান বড় হতে হতে যে লিঙ্গ পরিচয়ে স্বচ্ছন্দ হবে, সেই পরিচয়েই তাকে গ্রহণ করতে শিখতে হবে। তাই মনে রাখা দরকার তৃতীয় লিঙ্গের কথাও।’’

আশার কথা, একটু একটু করে হলেও প্রচলিত ভাবনায় পরিবর্তন আসছে। স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘‘উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তবান পরিবার, তা সে বাঙালি হোক বা অবাঙালি, তাদের অন্তত ৬০ শতাংশ এখন কন্যাসন্তান চাইছে। প্রথম বার কন্যাসন্তান হলেও দ্বিতীয় বার মেয়ে হবে জেনে আগের মতো প্রতিক্রিয়া হয় না অনেকেরই।’’ তবে স্বল্পশিক্ষিত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে ছবিটা এখনও একই রকম বলে জানাচ্ছেন তিনি। অভিনিবেশবাবুর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে প্রথম বারের পরে ফের কন্যাসন্তান হলে মা নিয়ে যেতে চাইছেন না, এমনও ঘটেছে। পরিবার-সমাজের চাপ এমনই।’’

মহিলা হলেও পুরোহিতের পেশা বেছে নিয়েছেন সোনালী মণ্ডল। তিনি এ বার হাওড়ার একটি মণ্ডপে পুজো করবেন। সোনালী বললেন, ‘‘মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। তা সে ছেলেই হোক বা মেয়ে। তার শারীরিক সুস্থতাই বড় কথা।’’

তবে ‘পুত্রান্‌ দেহি’ অর্থে শুধু পুত্রকেই চাওয়া হচ্ছে, এমনটা মানতে নারাজ প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য স্মৃতিতীর্থ। তিনি বোঝালেন, ‘‘পুত্রান্‌ দেহি-র মধ্যে সন্তানের ভাবনাই রয়েছে। এটা নিয়ে অহেতুক মাতামাতির কিছু নেই।’’

মন্ত্র যদি না-ও বোঝায়, মানসিকতা যে এখনও অনেক ক্ষেত্রে তেমনই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখনও বহু পরিবারে ছেলে আর বৌমার খাবারের পাত দেখলেই বোঝা যায় সে কথা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement