ন’মাস থেকে ১৫ বছরের কমবয়সিদের রুবেলা ও হামের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হল সোমবার, চেতলা গার্লস হাইস্কুলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
প্রথম দিনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, ২০ লক্ষ ৩২ হাজার ১১৭ জন। সোমবার রাজ্যে ন’মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সিদের হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক কর্মসূচি শুরু হল। তাতে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশের কিছু বেশি প্রতিষেধক দেওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রাত সওয়া ৮টা পর্যন্ত রাজ্যে ১৬ লক্ষ ১ হাজার ৮২৮ জন প্রতিষেধক নিয়েছে। মেয়েদের হার বেশি।
রাজ্যে এই প্রতিষেধকের মোট প্রাপকের সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লক্ষ। সোমবার রাত পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৫ জন ছেলে এবং ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৮২৩ জন মেয়ে ‘এমআর ভ্যাকসিন’ নিয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘প্রথম দিনেই ছবিটা বেশ আশাব্যঞ্জক। রাত ৮টার পরে গ্রহীতার সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রাপকের যে সংখ্যা ধরা হয়েছে, তাদের সকলেই যাতে প্রতিষেধক নেয়, তা দেখতে হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, দার্জিলিং ও কালিম্পং বাদে রাজ্যের সর্বত্র এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে ৭৭৩৪টি স্কুল এবং সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসালয় মিলিয়ে ৬৯টি কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, মোট ৭৮০৩টি কেন্দ্রে মিলছে প্রতিষেধক। প্রথম দিনে শহরের ১৬টি স্কুলে প্রতিষেধক পেয়েছে পড়ুয়ারা। এ দিন প্রতিষেধক নিয়ে তিন জন পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে সিউড়ির বছর চোদ্দোর এক কিশোর প্রতিষেধক নিয়ে আধ ঘণ্টা পরে বাড়ি চলে গিয়েছিল। ঘণ্টা তিনেক পরে এসে মাথা ঘোরার কথা জানায় সে। মেদিনীপুরের এক বালক প্রতিষেধক নিয়ে জ্ঞান হারায়। আগেও বেশ কয়েক বার জ্ঞান হারিয়েছিল ওই বালক। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘ওই তিন জন ভাল আছে। কয়েক জনের সামান্য সমস্যা ছাড়া কিছু হয়নি।’’
এ দিন শহরের বিভিন্ন স্কুলে দেখা গেল প্রতিষেধক নেওয়ার দৃশ্য। প্রথমে হাত বাড়িয়েও প্রতিষেধক দেওয়ার মুহূর্তে ভয়ে প্রধান শিক্ষিকার কোলে মুখ গুঁজল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। ‘বড়দি’ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে কিছুটা আশ্বস্ত হল সে। প্রতিটি স্কুলেই তিনটি ঘর ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিষেধকের জন্য। একটিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দ্বিতীয় ঘরে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ঘরে আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। শিক্ষাকর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে কলকাতার স্কুলগুলিতে এই কর্মসূচি যাতে সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তেমনই পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদি কোনও স্কুলে পড়ুয়া খুব কম থাকে, তা হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। তবে শহরের ১০০টির মতো স্কুল প্রথম পর্যায়ে প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচিতে রাজি হয়নি বলে খবর।
এ দিন চেতলা গার্লস হাইস্কুলে গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি জোরদার করতে সারা শহরে প্রচার চালানো হবে। স্কুলছুট থেকে শুরু করে বস্তির বাসিন্দাদের হাম-রুবেলা প্রতিষেধকের উপকারিতা বোঝাবেন পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরে মেয়র বলেন, ‘‘ন’মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সিরা সকলেই যাতে এই প্রতিষেধক কর্মসূচিতে আসতে পারে, তার জন্য আমাদের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’’ ওই স্কুলে উপস্থিত শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানান, অন্য প্রতিষেধক নিলেও হাম, রুবেলার প্রতিষেধক নেওয়া যাবে। যে কোনও সময়েই তা নেওয়া যেতে পারে।
জেলাতেও শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। প্রায় সর্বত্রই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে তদারকি করেছেন। যেমন, দক্ষিণ দমদমের একটি স্কুলে গিয়ে চেয়ারম্যান পারিষদ সঞ্জয় দাস জানান, মোট লক্ষ্যমাত্রা ৮০ হাজার ৬৮৩। তার মধ্যে স্কুলগুলিতে ৩০ হাজার পড়ুয়াকে এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। ওই পুর এলাকায় এ দিনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫১৭ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া। চলতি মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রা শেষ করতে চায় পুরসভা।