রাজপুরের মাছের বাজারে মাস্ক নেই প্রায় কারও মুখেই। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
কেউ ধার ধারছেন না মাস্কের।
ক্রেতা-বিক্রেতা খালি মুখেই একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন। বিক্রেতা চিৎকার করে দর হাঁকছেন। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে সবাই। কেউ সাজিয়ে রাখার মতো করে মাস্কটি থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। নাক-মুখ ঢাকার কোনও বালাই নেই। রবিবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল রাজপুর বাজারে। এমন অসতর্ক ভাবভঙ্গির ছবি এলাকার সর্বত্রই। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আবার আটোঁসাঁটো লকডাউন কার্যকর করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার কর্তারা।
গত তিন মাসে ওই পুর এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ জন। মৃতের সংখ্যা সাত। গত কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণও দ্রুত গতিতে বেড়েছে বলে পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে। এত শিথিলতা আগামী দিনে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে ভেবে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন পুরকর্তারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, লকডাউনে শিথিলতা নয়, বরং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, মেলামেশার এমন ছবি দেখা যাচ্ছে, যে মনে হচ্ছে লকডাউন পুরো উঠে গিয়েছে। ঠেসাঠেসি করেই অটোয় যাতায়াত করছেন এলাকার মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের দোকান-বাজার খোলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনও ভাবেই সংক্রমণ ছড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। সচেতনতার প্রচার বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বিধিনিষেধ কার্যকর করার চেষ্টাও করা হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক সমীক্ষা করে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। বাজার-দোকান খোলার বিষয়েও বিধিনিষেধ সুনির্দিষ্ট ভাবে কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সব কিছুই বাঁধনছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে।
এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘কলকাতায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। লকডাউনে শিথিলতা আসায় এখানকার লোকজন নিয়মিত কলকাতায় যাতায়াত করছেন। সংক্রমিত হয়ে এলাকায় ফিরছেন। ফলে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে।’’
সম্প্রতি লকডাউন শিথিল হওয়ায় চলছে বাস অটো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান বাজার খোলা থাকছে। পুরসভা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন আনলক পর্যায়ের নিয়ম শিকেয় তুলে সব কিছুই লাগামছাড়া হয়ে চলছে। এক পুরকর্তার ক্ষোভ, ‘‘সচেতন করা সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কেউ মাস্ক পরছেন না। অটো-বাসে দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে জটলা চলছে।’’
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘সম্প্রতি সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে শুরু হওয়ায় আমরা বিধিনিষেধ জারি করার বিষয়ে আবার চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’