Valentines Day

Valentines Day: শুধু একটি দিন নয়, জীবনকে ভালবেসেই ওঁদের যৌথ-যাপন

গত ২৪ বছর ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি শাড়ি উপহার দেন স্বামী। স্ত্রী উপহার দিয়েছেন এক বারই। নিজের লিভারের ৬৬ শতাংশ।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১৩
Share:

যুগল: সুজিত ও মধুমিতা রায়।

ওঁদের কাছে প্রেমের উদ্যাপন কোনও নির্দিষ্ট দিনে বাঁধা নেই। বরং, জীবনযাপনেই ওঁদের ভালবাসার উদ্যাপন। অর্ধাঙ্গিনী ওঁরা। প্রিয়জনকে আগলোনোর সিদ্ধান্তে যাঁরা সব বাধা পেরিয়েছেন।

Advertisement

গত ২৪ বছর ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি শাড়ি উপহার দেন স্বামী। স্ত্রী উপহার দিয়েছেন এক বারই। নিজের লিভারের ৬৬ শতাংশ। পেশায় বারাসত নবপল্লি বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত রায়কে নতুন জীবন দিয়েছে সেই উপহার। স্ত্রী মধুমিতা বাংলার শিক্ষিকা। নেশায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, দীর্ঘদিনের ডায়াবিটিসের রোগী সুজিতের ২০১২ সালে সিরোসিস অব লিভার ধরা পড়ে। ২০১৮-য় চিকিৎসক সুভাষ গুপ্ত এবং রাজেশ দে-র তত্ত্বাবধানে দিল্লির এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। স্ত্রীর লিভার নিতে রাজি ছিলেন না। আপত্তি ছিল পরিজনদেরও। তবে মাকে সমর্থন করেছিল দম্পতির অষ্টম শ্রেণির ছেলে। জ্ঞান ফিরলে চিকিৎসকদের থেকে সব শোনেন সুজিত। আইসিইউ-এ পিপিই কিট পরা স্ত্রীকে অন্য রোগীর পরিজন ভেবে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। মধুমিতার কথায়, ‘‘আজীবন সেই মুহূর্ত হৃদয়ে বাঁধানো থাকবে।’’ আর সুজিত বলছেন, ‘‘চোখ বুজে অনুভব করি, আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ...।’’

সুশান্ত ও পাপড়ি সরকার।

মনের মণিকোঠায় স্ত্রীর স্থান অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছে, মানছেন সুশান্ত সরকারও। পেশায় পরিবহণ ব্যবসায়ী সুশান্ত ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এক সময়ে তাঁর শরীর থেকে প্রোটিন বেরোনো শুরু হয়। নেফ্রোলজিস্টের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। স্ত্রী পাপড়ি সরকার মনস্থ করেন, স্বামীকে কিডনি দেবেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় সুশান্তের। সদ্য ডাক্তার হয়েছেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে। পাপড়ির কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, মানুষটাকে কিডনি দিতে গিয়ে যদি কারও ক্ষতি হয়, সেটা আমারই হোক। সে তো আমার আপনজন।’’ সুশান্তের কথায়, ‘‘এই কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’’

Advertisement

লক্ষ্মণ ও কাবেরী রায়

মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁর। তাই আজ সাহসী লক্ষ্মণ রায়। ক্রনিক লিভার ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হন ২০০৫ সালে। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। দিল্লিতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয় ২০১২ সালে। দশ বছর আগে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি কলকাতায় সেই ভাবে চর্চায় আসেনি। সেই সময়েই লিভারের ৩৫ শতাংশ দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্ত্রী কাবেরী রায়। দম্পতির একমাত্র মেয়ে এখন কলেজে পড়েন। কাবেরীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন পরিজনেরা। তবে দাদা দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কথা বিশেষ ভাবে বলতে চান কাবেরী। তাঁর কথায়, ‘‘যে মানুষটাকে ভালবেসেছি, তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দু’বার ভাবিনি।’’ আর লক্ষ্মণ বলছেন, ‘‘যাঁর জন্য এই জীবন, তাঁর স্থান আজ কোথায়, সে আমিই জানি। জীবন যে সুযোগ দিল, তা উপভোগ করতে চাই।’’

পলাশ ও টুম্পা গঙ্গোপাধ্যায়।

আঠারো বছরের সঙ্গী, স্ত্রী তো আছেনই। পরিচিত-অপরিচিতের ভালবাসাও তাঁকে আজ বাঁচিয়ে রেখেছে। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন ভাঙড়ের কাশীপুরের বাসিন্দা পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়। পেশায় স্থানীয় কিশোর ভারতী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০১২ সালে লিভারের জটিল অসুখ ধরা পড়ে। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে লিভার প্রতিস্থাপন হয় তাঁর। একমাত্র ছেলের কথা ভেবে স্ত্রীর লিভার নিতে রাজি ছিলেন না স্বামী। কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্ত্রী টুম্পা চক্রবর্তী গঙ্গোপাধ্যায় দেন ৭০ শতাংশ লিভার। পাড়ার লোক, স্কুলের সহকর্মীরা, ছাত্রছাত্রী এবং সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় এগিয়ে আসা দেশ-বিদেশের মানুষ বিপুল খরচের অর্ধেক দেন। পলাশ বলেন, ‘‘ওঁরাও এই জীবনের নেপথ্যে। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা তো ছিলই, কিন্তু ওঁকে আজ শ্রদ্ধা করি।’’ আর টুম্পার কথায়, ‘‘বিশ্বাস ছিল, দু’জনেই ফিরব। তবে মনকে বুঝিয়েছিলাম, কিছু হলে আমার সঙ্গেই হোক। পলাশ যেন সুস্থ থাকে।’’

তাই ওঁদের উপহার অক্ষয়। ‘হৃদয়ে লেখ নাম, সে নাম রয়ে যাবে...।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement