ছবি: সংগৃহীত
কখনও অগ্নিকাণ্ডে কী করতে হবে তার প্রচার। কখনও আবার বন্ধ দরজা হাত দিয়ে খুলতে গেলে কী বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে প্রচার। মেট্রো স্টেশনের টিভিতে এ সব নিয়ে নানা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। কিন্তু ঝাঁপ দিয়ে মেট্রোর লাইনে আত্মহত্যা রুখতে প্রচার কার্যত চোখে পড়ে না বলেই অভিযোগ।
মেট্রো সূত্রের খবর, গত ২১ বছরে কলকাতা মেট্রোয় আত্মহত্যার কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টার বহু ঘটনা ঘটেছে। যার সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার। এ দিন বিকেলে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে স্কুলের পোশাক পরা বছর তেরোর এক কিশোর আচমকা দমদমগামী একটি এসি মেট্রোর সামনে ঝাঁপ দেয়। তবে চালকের তৎপরতায় সে বেঁচে গিয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
কেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা-বিরোধী প্রচারে জোর দিচ্ছেন না, এই ঘটনার পরে ফের উঠেছে সেই প্রশ্ন। এমনকি এর পিছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মধ্য কলকাতার একটি নামী স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্র স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গা থেকে আচমকা ছুটে গিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়। কেন সে এমন করল, তার কারণ স্পষ্ট নয় তার আত্মীয়স্বজন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু বোঝার আগেই ওই ছাত্র ঝাঁপ দেয়।’’
মনোরোগ চিকিৎসক রঞ্জন ঘোষ জানান, বিদেশে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ঠেকাতে প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিনডোর থাকে। তা ছাড়া বিষণ্ণ যাত্রীদের আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে বাড়িতে তাঁর জন্য কেউ অপেক্ষা করছেন বলেও বার্তা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘আত্মহত্যা ঠেকাতে গেলে সামাজিক স্তরে ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানো
জরুরি।’’ কলকাতা মেট্রোয় অবশ্য স্টেশনে রক্ষীরা মোতায়েন থাকেন। তবে আত্মহত্যা ঠেকাতে রক্ষীর পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার করারও প্রয়োজন রয়েছে বলেই যাত্রীরা মনে করেন।
কলকাতা মেট্রোয় একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু আছে বটে। সোম থেকে শনি, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই নম্বর খোলা থাকে। যেখানে অবসাদগ্রস্ত কেউ ফোন করলে তাঁকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। হেল্পলাইনটি পরিচালনা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, চোখে পড়ে না, এমন জায়গাতেই হেল্পলাইনের পোস্টার দিতে বাধ্য হন তাঁরা। যাত্রীদের দাবি, এমন পরিষেবার কথা তাঁরা বেশির ভাগই জানেন না।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি মলি থাম্বির কথায়, ‘‘বিশেষ পরিস্থিতিতে মানুষ এমন ভাবতে থাকে। মনের ওই অবস্থা ঠিক হলে আত্মহত্যার মনোভাব পাল্টে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মেট্রোর আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।’’