ঝুকিপূর্ণ: চলন্ত বাসকে হাত দেখিয়েই চলছে রাস্তা পারাপার। মঙ্গলবার, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
হাসপাতালের সামনে কোথাও ট্র্যাফিকের দায়িত্বে মাত্র এক জন গ্রিন পুলিশ। কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ার, হোমগার্ডের উপরেই দায়িত্ব দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে গল্পে ব্যস্ত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। কোনও হাসপাতালের সামনে আবার সেটুকুও জোটেনি! কার্যত নজরহীন অবস্থাতেই নিজ দায়িত্বে চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পারাপার করছে আমজনতা। অধিকাংশের ট্র্যাফিক-বিধি মেনে চলার সচেতনতা নেই, নেই পুলিশের তরফে সেই বিধি বলবৎ করার চেষ্টাও!
বেহালায় পথ দুর্ঘটনায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পরে কড়াকড়ি ফিরেছে স্কুলের সামনে। রাতারাতি ঘটনাস্থলে পুলিশকর্মী মোতায়েন করার পাশাপাশি, পথচারী-নিয়ন্ত্রণে লাগানো হয়েছে বুম ব্যারিয়ার। প্রায় সর্বক্ষণের জন্য পুলিশি নজরদারির বন্দোবস্ত হয়েছে ওই এলাকায়। কিন্তু শহরের বাকি অংশে? মঙ্গলবার উত্তরের একাধিক হাসপাতালের সামনে ঘুরে সচেতনতা তো বটেই, পুলিশি কড়াকড়িরও তেমন কোনও বন্দোবস্ত চোখে পড়ল না। বরং সবটাই কার্যত চলছে পুরনো নিয়মে, গা-ছাড়া ভাবে।
মঙ্গলবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ক্ষুদিরাম বসু সরণিতে গিয়ে দেখা গেল, এক জন হোম গার্ড ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলেই রাস্তার উল্টো দিকে ওষুধের দোকানে যাচ্ছেন রোগীর আত্মীয়েরা। কেউ আবার রাস্তা পারাপর করছেন ফোন কানে দিয়েই। রাস্তার দু’দিকে দড়ি টেনে পথচারী আটকানোর ব্যবস্থা থাকলেও তার ব্যবহার চোখে পড়ল না। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর সামনেই দেদার ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙা চললেও ভ্রূক্ষেপ নেই। আটকাচ্ছেন না কেন? কর্তব্যরত হোমগার্ডের উত্তর, ‘‘কত বলব! বলে বলে মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। আর দু’-এক জনে মিলে কি এত ব্যস্ত রাস্তা সামলানো যায়?’’ একই ছবি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও। হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছে একের পর এক গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স, তার মধ্যে দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পেরোচ্ছেন পথচারীরা। প্রথমে সেখানে কোনও পুলিশকর্মীর দেখা না মিললেও মিনিট দশেক পরে দেখা মিলল এক গ্রিন পুলিশের। আর কেউ এখানে থাকে না? তিনি বললেন, ‘‘আমায় বলেছে, আমি রয়েছি। বাকি কে আছে, কে নেই জানি না।’’
মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালের সামনের অবস্থা আরও বিপজ্জনক। প্রবল গতিতে সিআইটি রোড ধরে ছুটছে একের পর পর সরকারি, বেসরকারি বাস ও গাড়ি। পুলিশ-শূন্য অবস্থায় ট্র্যাফিক সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে সেখানে রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। স্থানীয় দোকানদারেরা জানালেন, সেখানে বিশেষ পুলিশ থাকে না। আরও ভয়াবহ ছবি এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে হাসপাতালের আপৎকালীন ভবনের দরজার সামনের দিকে ব্যারিকেড করে দেওয়া রয়েছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার এ জে সি বসু রোডের গাড়ির জট সামলাচ্ছেন। কিছুটা দূরে গাছতলায় দাঁড়িয়ে এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। পাশেই ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার করছেন হাতে গোনা কয়েক জন পথচারী। ট্র্যাফিক-বিধি ভেঙে রাস্তা পেরোনো মধ্যবয়স্ক এক পথচারীকে প্রশ্ন করায় তিনি সটান বললেন, ‘‘পুলিশ তো কিছু বলে না! তাড়াহুড়োয় এটাই সুবিধা হয়।’’ তবে সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি এড়িয়ে গেলেন।
বেহালার দুর্ঘটনার পরেও যে শহরের একটা বড় অংশের ছবির যে বদল ঘটেনি, কার্যত তা-ই দেখা গেল। যদিও লালবাজারের এক পুলিশ কর্তার দাবি, ‘‘শহরের সর্বত্র পুলিশি নজরদারি রয়েছে। হাসপাতালগুলির সামনেও অতিরিক্ত ব্যবস্থা থাকে সব সময়ে। শহরে দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ সব সময়ে তৎপর। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’