ফাইল চিত্র।
আম বাঙালির থলে হাতে বাজার যাওয়ার পুরনো দৃশ্য কি ফিরতে চলেছে? ১ জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের এবং এক বারই ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক বা তা দিয়ে তৈরি সামগ্রী এ দেশে নিষিদ্ধ হতে চলেছে। সেই ঘোষণার পরেই প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে চলছে আলোচনা! প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ছাড়া এমন কী আছে, যাতে বাজার করলে মাছ-মাংসের রক্ত রাস্তায় পড়বে না?
কলকাতা পুরসভা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশকর্মীদের বড় অংশেরই দাবি, বিকল্প রয়েছে প্রচুর। তাঁরা জানান, কমমাইক্রনের প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে ব্যবহারে যত না সমস্যা, পুনর্ব্যবহার সমস্যা বেশি। কারণ তা পুনর্ব্যবহার করা যায় না। ফেলে দেওয়ার পরে সেগুলি খুব ছোট ছোট ভাগে ভেঙে যায়। তখন আর আলাদা করে সরানো যায় না। মিশে যায় বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে। অনেকে প্লাস্টিক জড়ো করে পুড়িয়ে দেন। ওই ভাবে প্লাস্টিক পোড়ালে স্টাইরিন বাডাইঅক্সিনের মতো ‘কার্সিনোজেনিক’ (যা থেকে ক্যানসার হতে পারে) উপাদান তৈরি হয়। তাই পরিবেশ মন্ত্রক একটি নির্দেশিকায় জানায়, পলিস্টিরিন-সহ যে কোনও ‘সিঙ্গল ইউজ়’ প্লাস্টিকের উৎপাদন, বিক্রি, আমদানি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করা হবে ২০২২-এর জুলাই থেকে। আগামী ডিসেম্বর থেকে ১২০ মাইক্রনের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ফলে এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিকে তৈরি মিষ্টির বাক্স, কাপ, চামচ, ছুরি, বাটি, সিগারেটের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাঠি— সবই নিষিদ্ধ তালিকায় পড়বে।
শহরের একটি সরকারি কলেজের রসায়নের শিক্ষক শুভেন্দু দত্ত বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের বদলে এখন যেনরম সাদা কাপড়ের মতো জিনিসের ক্যারিব্যাগ মেলে, সেগুলি বহু ক্ষেত্রেই পলিস্টিরিন দিয়ে তৈরি। তার চেয়ে অনেক নিরাপদ পলিয়েস্টারের ক্যারিব্যাগ। ওই ব্যাগে তরলও বহন করা যায়। বেশির ভাগ পলিয়েস্টার রাসায়নিক পদ্ধতিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত নজরদারি দরকার।’’
প্লাস্টিক প্যাকেটের বিকল্প তৈরির একটি সংস্থার প্রধান সুজাতা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অনেকে বিকল্পের দাম বেশি বলছেন। কিন্তু এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিকেরঅর্ধেক খরচে পুরনো জামাকাপড় কেটে বানানো ব্যাগ কেনা যায়।’’ সুজাতা জানান, প্রান্তিক এলাকার মহিলাদের নিয়ে তিনি পুরনো পোশাক কেটে ব্যাগ বানানোর প্রকল্প শুরু করেছেন।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে এমনই বিকল্প সামগ্রী তৈরির কাজ চালাচ্ছেন শম্পা দে শ্রীনিবাসন। তিনি বলেন, ‘‘কাগজ, চট ও কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করছে আমাদেরছেলেমেয়েরা। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে প্রচুর বরাত আসছে।’’ একই রকম দাবি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান সোমিনি সেন দুয়া-র। আগামী বৃহস্পতিবার গড়িয়াহাটে হকারদের বিনামূল্যে কাগজের ও ক্রেতাদের কাপড়ের ব্যাগ দেবেন তাঁরা। বললেন, ‘‘শালপাতা, কলাপাতার বাক্স, বেত, মাটি বা চটের সামগ্রীও বিকল্প হতে পারে।’’ বেতের সামগ্রী তৈরির একটি সংস্থার প্রধান বেদিকাখেতাওয়াত বললেন, ‘‘লকডাউনে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাস্তায় অনেককে খাইয়েছে। গরম খাবার দেওয়া হচ্ছিল প্লাস্টিকের পাত্রে। ওই ক্ষতিকর পদ্ধতির বিকল্প কিছু দিতেই এই উদ্যোগ।’’
সুপুরি পাতা দিয়ে থালা, বাটি তৈরির একটি কারখানার মালিক, জলপাইগুড়ির শ্যামল সাঁতরা আবার বললেন, ‘‘সুপুরি পাতায় বসে গাড়ি গাড়ি খেলতাম আমরা। সেই সুপুরি পাতাই আমার কাছে প্লাস্টিকের বিকল্প।’’