চিনার পার্কের এই বহুতলের নীচে সোফার গুদামে আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
এ যেন জতুগৃহে বসবাস।
ফ্ল্যাটবাড়ির উপরের তলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন লোকজন।নীচের তলায় দোকানের মধ্যে আগুন জ্বেলে সারা দিন চলে রান্নাবান্না। সেই দোকানে অগ্নি-বিধি মেনে চলার যেমন বালাই নেই, তেমনইবহুতলেও কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এমন ছবিবিধাননগর পুরসভার অধীনস্থ বহু এলাকায়।
সম্প্রতি বিমানবন্দর থানার অধীনস্থ চিনার পার্ক এলাকায় একটি পাঁচতলা বহুতলের একতলায় থাকা বন্ধ সোফার গুদামে আগুনলেগেছিল। ধোঁয়া ও আগুন উপরের দিকে উঠতে থাকায় আতঙ্ক ছড়ায় আবাসিকদের মধ্যে। স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধারকরে নামিয়ে আনেন। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ওই বহুতলে উপযুক্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ফলে মধ্যরাতে ওই অগ্নিকাণ্ডঘটলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল।
গত জানুয়ারিতে বাগুইআটি মোড়ে একটি বহুতলের নীচে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এসি মেশিনেরলাইনে শর্ট সার্কিটের জেরেভোরের দিকে আগুন লেগেছিল। সেই সময়েও বহুতলের উপরের তলেথাকা আবাসিকেরা কোনও রকমে নীচে নেমে আসেন। প্রায় ঘণ্টা ছয়েকের চেষ্টায় দমকল সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। ওই বহুতলে বসবাসকারী একটি পরিবার জানিয়েছে, বহু বছর আগে নীচের তলার ফ্ল্যাটটি তারাই ওই ব্যাঙ্কটিকে ভাড়া দিয়েছিল। পরিবারের এক সদস্যের কথায়,‘‘আমাদের ফ্ল্যাটে দু’টি সিঁড়ি রয়েছে। আগুন দেখে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলাম। কিন্তুসেখানে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বলে তেমন কিছু নেই। এ বার তা বসাব আমরা।’’
চিনার পার্কের ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি বিধাননগর পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সম্রাট বড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমরা যখনই দেখি এ ভাবে ফ্ল্যাটের নীচে দোকান বা খাবারের দোকান চলছে, তখনই তাঁদের সতর্ক করি। ওই বাড়িটিরঅগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কী ছিল, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
উপযুক্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ফ্ল্যাটবাড়ির নীচেরতলায় বাণিজ্যিক কাজকর্ম চলছে— এমন দৃশ্য চোখে পড়বে বাগুইআটি, চিনার পার্ক, কৈখালি, তেঘরিয়া, রাজারহাটের মতো এলাকায়।সেই সব দোকানে নামমাত্র অগ্নি-নির্বাপক মজুত থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাতে দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা চলে গেলেও উপরের তলে রয়ে যান ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। তাই অনেকেই মনে করেন, অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলেসবার আগে বিপদের মুখে পড়বেন ওই আবাসিকেরাই। বহু পুরনো আবাসন তো বটেই, এমনকি নতুন তৈরি একাধিক বহুতলেরও নীচের তলাটি দোকান করার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে দোকান খুলে বসা বিক্রেতারা আদৌ কতটা অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখছেন বা সংশ্লিষ্ট আবাসনে আদৌসেই ব্যবস্থা আছে কি না, তার খবর পুর প্রশাসনের কাছে নেই বলেই অভিযোগ।
ইদানীং সল্টলেকেও এমন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যেখানে আবাসন বা ব্যক্তিগত বাড়ির নীচের তলায় রমরমিয়ে চলছে খাবারের দোকান, রেস্তরাঁ। অথচ সেখানে উপযুক্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এমন পরিস্থিতি যে কাঙ্ক্ষিত নয়, তা মানছে বিধাননগর পুরসভাও। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে সতর্ক আছি। বিভিন্ন আবাসনকে নোটিস পাঠাচ্ছি, যাতে তাঁরা নিজেদের অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজুত রাখেন।’’
এ ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে তৈরিবিধাননগর কমিশনারেটও। নগরপাল গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে পুরসভা এবং দমকল।তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে যা করণীয়, তা পুলিশ করবে। মানুষের নিরাপত্তা সবার আগে।’’