নার্সিংহোমে দড়ি ছিঁড়ে লিফ্ট উপর থেকে নীচে পড়ায় সোমবার গুরুতর আহত হয়েছিলেন মালিক দম্পতি। প্রতীকী ছবি।
কসবার রাজডাঙায় একটি নার্সিংহোমে দড়ি ছিঁড়ে লিফ্ট উপর থেকে নীচে পড়ায় সোমবার গুরুতর আহত হয়েছিলেন মালিক দম্পতি। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁদের চিকিৎসা চলছিল ইএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই গভীর রাতে মারা গেলেন নার্সিংহোমের মালকিন, পেশায় চিকিৎসক চৈতালি মিত্র (৫১)। তাঁর স্বামী অনির্বাণ মিত্রের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তিনিও পেশায় চিকিৎসক। প্রসঙ্গত, ওই নার্সিংহোমের উপরে চারতলার ফ্ল্যাটে বসবাস মিত্র দম্পতির। সোমবার দুপুরে তাঁরা লিফ্টে চারতলার ফ্ল্যাটে উঠছিলেন। সেই সময়েই লিফ্টের দড়ি ছিঁড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। যে সংস্থা লিফ্ট বসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে কসবা থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নার্সিংহোমে লিফ্ট বসানো হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। কিন্তু তার পর থেকে সেটি বিকল হয়েছে একাধিক বার। এর পরেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে লিফ্টসারানোর জন্য একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই সংস্থার মালিক সুভাষ ভুঁইয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘লিফ্টে সমস্যা হওয়ায় বছরখানেক আগে ডাক্তারবাবু আমাদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করেন। তিন-চার বার লিফ্ট সারাতে এসেছিলাম। যে সংস্থা লিফ্ট বসিয়েছিল, তাদের তরফেই একাধিক ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুটি মেরামতির জন্য কী কী করণীয়, তাতে কত খরচ হতে পারে, সবই জানিয়েছিলাম। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ ডাক্তারবাবু আমাকে ফোন করে জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে এত দিন লিফ্টটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ বার তিনি লিফ্ট সংস্কারে হাত দেবেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুনি, এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
এ দিন ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা গেল, কর্মীরা কেউ কথা বলার অবস্থায় নেই। লিফ্টের দরজায় তালা দিয়েছে পুলিশ। লিফ্টের নীচে তখনও পড়ে আছে কয়েকটি চটি। অনির্বাণ ও চৈতালির একমাত্র সন্তান অর্চিষ্মান মিত্র। আইনের ছাত্র অর্চিষ্মান এ ভাবে মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন।নার্সিংহোমের এক কর্মী দীপঙ্কর নাথ বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু এখনও আইসিইউ-তে। তবে আগের তুলনায় কিছুটা ভাল আছেন।’’
গত এপ্রিলে পার্ক স্ট্রিটের একটি বহুতল আবাসনে লিফ্ট ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষীর। কয়েক মাস আগে হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকায় লিফ্ট বিকল হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিলেন ন’জন। শহরে বহুতল আবাসন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিসে লিফ্টের মাধ্যমে মানুষ ওঠানামা করেন। এমন দুর্ঘটনা ঠেকাতে নিয়মিত লিফ্টের রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, শহরের অধিকাংশ বহুতল আবাসনে লিফ্ট রয়েছে। নিয়মমাফিক সেগুলির তদারকি প্রয়োজন। তার জন্য সংশ্লিষ্ট আবাসন কমিটি বা বাড়ির মালিককেই সচেতন হতে হবে।