খাঁ খাঁ: ছুটির দিনে কার্যত ফাঁকা প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মল। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
করোনার ভয় জয় করে কি শপিং মল, রেস্তরাঁয় উপচে পড়া ভিড় হবে?
আশা ছিল, সব খুলে যাওয়ার পরে প্রথম শনি ও রবিবারই চিত্রটা বোঝা যাবে। কিন্তু করোনা ভয়ের চেয়েও এই দু’দিনই মল কর্তৃপক্ষ এবং রেস্তরাঁ মালিকদের চিন্তা বাড়াল দিনভর বৃষ্টি। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত ৮ তারিখ খোলার পর থেকে যা লোক হয়েছে, রবিবার সর্বত্রই সেই সংখ্যাটা ছিল তার ২০-২৫ শতাংশ কম। কয়েকটি শপিং মলে সেই সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে গিয়েছে।
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে করোনা পরিস্থিতিতে ২০ হাজার লোকের এক বারে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে রবিবার সেই সংখ্যা ১১ হাজারের উপরে ওঠেনি। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দীপ বিশ্বাস বলেন, “নতুন বেশ কিছু রেস্তরাঁও খুলে গিয়েছে মলে। আশা ছিল, এ দিনই রেকর্ড ভিড় হবে। কিন্তু বৃষ্টিই সব নষ্ট করে দিল।” কসবা কানেক্টরের একটি শপিং মলে সাধারণত ২৫ হাজার মানুষের একসঙ্গে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে দূরত্ব-বিধির কারণে সেখানে সর্বাধিক ন’হাজার লোককে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার সেখানে ছ’হাজার লোক এলেও বৃষ্টির কারণে এ দিন সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজারে। ওই মলের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন্স) কে বিজয়ন বলেন, “রক্তশূন্য হয়ে পড়া মল ব্যবসা এই দু’টি দিনের দিকেই অনেকটা তাকিয়ে ছিল। কিন্তু বৃষ্টি সব আশায় জল ঢেলে দিল!” সল্টলেক এবং নিউ টাউনের দু’টি মলেও এ দিনের সর্বশেষ হিসেবে ছ’হাজার করে লোক হয়েছে। বাইপাসের ধারের একটি শপিং মলে এ দিন লোক হয়েছে মাত্র তিন হাজার। পার্ক সার্কাসের কাছের একটি মলে পাঁচ হাজার লোক হয়েছে। রবিবারের নিরিখে যা খুবই কম বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
আরও পড়ুন: সশরীরে শুনানি অনিশ্চিত আলিপুর কোর্টে
বন্ধুদের সঙ্গে বাইপাসের মলে গিয়েছিলেন যাদবপুরের স্বর্ণলতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আড্ডা দিয়ে ঘুরেফিরে, পোশাকও কেনেন তিনি। মাস্ক এবং নতুন কেনা পোশাক পরে নিজস্বী তুলে প্রিয়জনকে তা পাঠান। সংশ্লিষ্ট স্টোরের কর্মী বললেন, “সারা দিনে এমন চার-পাঁচ জন আসছেন। বহু ক্ষণ ঘুরেও কিছু কিনছেন কি না, ঠিক নেই। একসঙ্গে প্রচুর কেনাকাটা না হলে এখন ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল।”
লোক নেই বালিগঞ্জের একটি রেস্তরাঁতেও। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সল্টলেকের শপিং মলে আবার খাঁ খাঁ করছিল খাবারের দোকান এবং পোশাকের বিপণি। সেখানেই বসে ভরসন্ধ্যায় মোবাইলে গেম খেলতে ব্যস্ত স্টোরের কর্মী বললেন, “সকাল থেকে মোটে তিন জন এসেছেন। অধিকাংশই মলে চুল-দাড়ি কাটাতে আসছেন।”
একই অবস্থা শহরের রেস্তরাঁগুলিরও। হিন্দুস্থান পার্কের যে রেস্তরাঁয় রবিবার সন্ধ্যায় জায়গা পেতে আগাম ফোন করতে হয়, সেখানে এ দিন বিকেল পাঁচটায় বসে শুধু এক যুগল। পার্ক সার্কাসের আর এক রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ বললেন, “দ্রুত কিছু ভাবতে হবে। ভিতরে বসে খাওয়ার চেয়ে আমাদের মূল গেটের বাইরের রোলের দোকানে বেশি ভিড় হচ্ছে। রোল বেচে কি আর রেস্তরাঁ চলবে?” ৮০ শতাংশ রেস্তরাঁ মালিকের দাবি, এখনও খাবার আনানোর অ্যাপের উপরই নির্ভর করছেন তাঁরা।
‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র সাধারণ সম্পাদক সুদেশ পোদ্দার আবার বললেন, “চালানো তো দূর, রেস্তরাঁ খুলে রেখে কর্মীদের বেতনের টাকাই উঠছে না। আর এক সপ্তাহ দেখব, তার পরে অন্য কিছু ভাবতে হবে। রাত ন’টার পরেই কার্ফু। যাঁরা রাতের খাবার খেতে আসেন, রাত ন’টা তাঁদের কাছে সন্ধ্যা। এ ভাবে চলে?” প্রৌঢ়া মাকে মাস্ক পরিয়ে সল্টলেকের শপিং মলে এনেছিলেন উত্তর কলকাতার শৈলেন ঘোষ। তিনি বললেন, “খিটখিটে ভাব, মানসিক অবসাদ বেড়ে যাচ্ছে মায়ের। মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে মায়ের মন ভাল করতে এখানে ঘোরাতে এনেছিলাম।”
শহরের মন বদলাবে কবে? রেস্তরাঁ মালিক থেকে মল কর্তৃপক্ষের এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নিম্নচাপের কালো মেঘে ঢাকা।
আরও পড়ুন: রিপোর্ট নেগেটিভ, পুলিশের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা