Bangladesh Unrest

শিকেয় ব্যবসা, খালি ঘর নিয়ে বসে অতিথিশালা

মঙ্গলবার সকাল থেকে অতিথির তেমন দেখা নেই। রাস্তায় দোকানি বসে রয়েছেন হতাশ মুখে। উধাও এলাকার জমজমাট পরিবেশ। খাবারের দোকানেও তেমন ভিড় জমছে না।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৮
Share:

বাংলাদেশি অতিথিদের অভাবে জনহীন অতিথিশালা। মঙ্গলবার, শান্তি পার্ক এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

ঘর খালি আছে লেখা বোর্ড ঝোলানো হয়েছে অতিথিশালার দেওয়ালে। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে অতিথির তেমন দেখা নেই। রাস্তায় দোকানি বসে রয়েছেন হতাশ মুখে। উধাও এলাকার জমজমাট পরিবেশ। খাবারের দোকানেও তেমন ভিড় জমছে না। এমনই ছবি মুকুন্দপুরের সোনালি পার্ক, শান্তি পার্কে। বাংলাদেশের অশান্ত পরিবেশ প্রভাব ফেলেছে এই সমস্ত এলাকার অতিথিশালার ব্যবসায়।

Advertisement

চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য কাজে কলকাতায় এলে বাংলাদেশের নাগরিকদের একটি বড় অংশ মুকুন্দপুরের এই সমস্ত এলাকার বিভিন্ন অতিথিশালায় থাকেন। মধ্য কলকাতার সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিটের পাশাপাশি সোনালি পার্ক, শান্তি পার্কের মতো জায়গাও গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিত। ওই এলাকায় অন্তত দেড়শো এমন অতিথিশালা রয়েছে। গোটা এলাকার অর্থনীতিটাই নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের উপরে। তাঁদের ভিড় রাস্তায় সব সময়ে লেগেই থাকে। এমনই একটি অতিথিশালার মালকিন মালতী বেয়ারা জানালেন, তাঁরাও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। অতিথিশালার নীচে মালতীর দোকানও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সংরক্ষণ নিয়ে সমস্যা মেটার পরে আমরা আশা করেছিলাম, ব্যবসার হাল ফিরবে। অল্প অল্প করে লোকজন আসা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু আবার সবটা ঘেঁটে গিয়েছে।’’ অতিথিশালার পাশাপাশি ওই এলাকায় রয়েছে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের বেশ কয়েকটি সংস্থার অফিস এবং বাংলাদেশি খাবারের রেস্তরাঁও। যে কারণে জায়গাটি ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামেও পরিচিত।

গত দু’দিন ধরে ওই সমস্ত অতিথিশালা কার্যত খাঁ খাঁ করছে। ঘর খালি পড়ে রয়েছে। একটি অতিথিশালার কর্মী দীপঙ্কর মণ্ডলের কথায়, ‘‘অন্য সময়ে ঘর দিতে পারি না। এই চত্বরে প্রতিদিন হাজার-দু’হাজার লোকের যাতায়াত থাকে। গত দু’দিন ধরে নতুন করে কেউ ঘর নিতে আসেননি। কয়েক জন তড়িঘড়ি সোমবার বেরিয়ে গিয়েছেন। কয়েক জন আটকে রয়েছেন।’’ অতিথিশালার ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাংলাদেশে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই লোকজনের যাতায়াত কমেছে। তার উপরে বর্তমান পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে পরিবহণ ব্যবস্থা ঘিরে অনিশ্চয়তা— সব মিলিয়ে অতিথিশালার ব্যবসায় যেন মন্দা লেগে রয়েছে। অন্য একটি অতিথিশালার এক কর্মী বললেন, ‘‘আজ দুপুরে এক জন মাত্র এসেছেন। তবে, তিনি এ রাজ্যের বাসিন্দা। বহু ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, সীমান্ত পেরোলেও নিজেদের গন্তব্য অবধি পৌঁছতে ঝামেলায় পড়তে পারেন।’’

Advertisement

এই সমস্ত অতিথিশালা নির্ভরশীল মূলত আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপরে। সেখানে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা, নাটোর, রাজশাহী, ঢাকার মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। গত ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা এখানকার হাসপাতাল ব্যবসার উপরেও খানিকটা প্রভাব ফেলেছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র জানালেন, সোমবার সেখানে ১২৯ জন বাংলাদেশের রোগী এসেছিলেন। মঙ্গলবার সংখ্যাটা ৮৪-তে নেমেছে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেকে আটকে পড়েছেন। বহু মানুষ বর্তমানে আসতে পারছেন না বলেও শুনছি। আমরা বাংলাদেশের রোগীদের জানিয়েছি, যে কোনও প্রয়োজনে আমরা সাহায্য করব। এক রোগীকে এ দিন আমরা ইমেলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছি।’’

অতিথিশালাগুলি জানাচ্ছে, মূলত মেডিক্যাল ভিসা নিয়েই লোকজন চিকিৎসার জন্য
আসেন। ভিসার মেয়াদের পাশাপাশি হাতের টাকাও ফুরিয়ে এসেছে অনেকের। তেমনই এক জন রাজশাহীর মহম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘যখন এসেছিলাম, তখন পরিস্থিতি ঠিক ছিল। রবিবার চিকিৎসা শেষ হয়েছে। এখনও ফিরতে পারিনি। সীমান্ত খোলা কিনা, বুঝতে পারছি না। অতিথিশালাও কিছু বলতে পারছে না। এখানকার হিসাবে এক
লক্ষ টাকা এনেছিলাম। সেই টাকা প্রায় শেষের পথে। দু’-এক দিনের মধ্যে বেরোতে না পারলে সমস্যায় পড়ে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement