শেষ সুরক্ষা-যাচাই ১১ বছর আগে, বাড়ি এল সেই সিলিন্ডার

রান্নাঘরে গ্যাসের আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন তাঁর দাদা-বৌদি এবং গ্যাস সারাতে আসা এক ব্যক্তি। তার পর থেকে সামান্য পোড়া গন্ধ নাকে এলেই বুক শুকিয়ে যায় বরাহনগরের সুব্রত দাসের। রান্নাঘরে গ্যাসের ব্যবহার নিয়েও প্রচণ্ড সজাগ তিনি। বারবার সতর্ক করেন স্ত্রীকে। যে দুর্ঘটনায় দাদা-বৌদির মৃত্যু হয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন আদালতে। এর মাঝেই বাড়িতে হাজির একটি সিলিন্ডার, যার গায়ে লেখা ডি-০৮। ভয়ে হাড় হিম হয়ে গিয়েছে সুব্রতবাবুর।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩
Share:

রান্নাঘরে গ্যাসের আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন তাঁর দাদা-বৌদি এবং গ্যাস সারাতে আসা এক ব্যক্তি। তার পর থেকে সামান্য পোড়া গন্ধ নাকে এলেই বুক শুকিয়ে যায় বরাহনগরের সুব্রত দাসের। রান্নাঘরে গ্যাসের ব্যবহার নিয়েও প্রচণ্ড সজাগ তিনি। বারবার সতর্ক করেন স্ত্রীকে। যে দুর্ঘটনায় দাদা-বৌদির মৃত্যু হয়েছে, তার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন আদালতে। এর মাঝেই বাড়িতে হাজির একটি সিলিন্ডার, যার গায়ে লেখা ডি-০৮। ভয়ে হাড় হিম হয়ে গিয়েছে সুব্রতবাবুর।

Advertisement

জানা গিয়েছে, প্রতিটি খালি সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করার কথা প্রস্তুতকারক সংস্থার। যদি দেখা যায় সেই সিলিন্ডার ঠিক অবস্থায় রয়েছে, তবেই তাতে গ্যাস ভরে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা। সিলিন্ডার ঠিক না থাকলে তা নষ্ট করে ফেলতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, একটি খালি সিলিন্ডার যে দিন পরীক্ষা করা হয়, সে দিনই ওই সিলিন্ডারের গায়ে পরবর্তী পরীক্ষার দিনক্ষণ (এক সময়ে যা ছিল পাঁচ বছর পরে) খোদাই করে দেওয়ার কথা। যাতে সেই দিনক্ষণ দেখে পাঁচ বছর পরে আবার ওই সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করা যায়, পাশাপাশি গ্রাহকও যাতে বুঝতে পারেন যে, সিলিন্ডারটি ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বছরকে চারটি ভাগে ভাগ করে ইংরেজির এ, বি, সি, ডি-তে নামাঙ্কিত করা হয়।

ডি-০৮ অর্থে, সুব্রতবাবুর কাছে পৌঁছনো সিলিন্ডারটি ২০০৮ সালের শেষ তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা করার কথা ছিল। যার মানে দাঁড়ায়, সিলিন্ডারটি এগারো বছর আগে, ২০০৩ সালে শেষ বার পরীক্ষা করা হয়েছিল। ইন্ডিয়ান অয়েলের পক্ষ থেকে মাঝে যুক্তি দেখানো হয়, সিলিন্ডারের মেয়াদ আগে যেটা পাঁচ বছর ছিল, তা এখন বেড়ে দশ বছর হয়ে গিয়েছে। এই যুক্তি মানলেও ২০০৩ সালে শেষ বার পরীক্ষা করা সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করার কথা ছিল ২০১৩ সালের শেষে। এখন থেকে এক বছর আগে!

Advertisement

গ্যাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েলের এক কর্তা বলেন, “কোনও ভাবে ওই সিলিন্ডারটি সময় মতো পরীক্ষা ছাড়াই বাজারে বেরিয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ৬০ লক্ষ গ্রাহকের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় ১ কোটি সিলিন্ডার। প্রতি দিন ১ লক্ষ ৬০ হাজার সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রাহকের বাড়িতে। সিলিন্ডারের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার পরে এত সিলিন্ডারে ওই দিনক্ষণ হাতে হাতে খোদাই করতে হচ্ছে। তার জন্য কোনও যন্ত্র নেই। ফলে ভুলচুক হচ্ছে।” ওই কর্তার অনুরোধ, এ বার থেকে বাড়িতে নতুন সিলিন্ডার পৌঁছনোর সময়ে গ্রাহক ওই দিনক্ষণ পরীক্ষা করে নিলে সমস্যা কমে যাবে। যদি দেখা যায় সেখানে আগের কোনও দিনক্ষণ খোদাই করা রয়েছে, তা হলে সিলিন্ডারটি সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলা হবে।

সুব্রতবাবুর অভিযোগ, ছ’বছর আগে মার্চ মাসে বাড়িতে রান্না করার সময়ে আগুনের রং দেখে সন্দেহ হয়েছিল তাঁর বৌদি প্রিয়া দাসের (৪৫)। সাধারণত গ্যাসের যে গন্ধ বেরোয়, তা-ও ছিল না। ডিস্ট্রিবিউটরকে খবর পাঠানোর পরেও তারা আসেনি। ওভেনের এক মেকানিককে ডেকে পাঠানো হয়। সেই মেকানিক প্রশান্ত দেবনাথ এসে পরীক্ষা করে জানান, ওভেন ঠিক আছে। পাশে ছিলেন প্রিয়াদেবী। গ্যাস জ্বালাতেই আচমকাই দপ করে জ্বলে ওঠে ওভেন। দু’জনেই পুড়ে যান। তাঁদের চিত্‌কার শুনে রান্নাঘরে ছুটে আসেন সুব্রতবাবুর দাদা, প্রিয়াদেবীর স্বামী শুভেন্দুবাবু। স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিও পুড়ে যান। তিন জনকেই প্রথমে আর জি কর হাসপাতালে এবং পরে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলে চিকিত্‌সা। কিন্তু ২৪ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল এবং ৮ মে পরপর প্রশান্তবাবু, প্রিয়াদেবী এবং শুভেন্দুবাবু তিন জনেই মারা যান। ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ চেয়ে মামলা করা হয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল এবং ওই ডিস্ট্রিবিউটারের বিরুদ্ধে। সেই মামলা এখনও চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement