পারদ চড়তেই পাখা বিক্রির ধুম বেড়েছে। ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
হঠাৎ বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রার দোসর শুকনো হাওয়া। আর তার জেরেই কার্যত হাঁসফাঁস অবস্থা কলকাতার। পরিস্থিতি এমনই যে মার্চের প্রথম দিন থেকেই গায়ে জ্বালা ধরছে শহরবাসীর। প্রশ্ন উঠছে, এখনই এই হাল হলে এপ্রিল, মে মাসে কী হবে? আরও বড় প্রশ্ন, ভোটমুখী শহরে শরীর সুস্থ থাকবে তো? আশঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, এখনই বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ দাস বলেন, ‘‘গত ১০ দিনে বৃষ্টি হয়নি। আকাশ পরিষ্কার থাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেও বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছি না। বৃষ্টি না হলে কিন্তু তাপমাত্রা কমবে না। এপ্রিল, মে মাস নাগাদ অন্য বারের মতোই গরম পড়ার কথা। কিন্তু সেই গরম আরও বাড়বে কি না, সেটা বৃষ্টির উপরেই নির্ভর করবে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে এখনই সতর্ক না হলে সমূহ বিপদ। তাপমাত্রা বাড়ছে বলেই হঠাৎ ঠান্ডা জল খাওয়া শুরু করলে, গরম থেকে এসেই জোরে পাখা চালিয়ে দিলে বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার হঠাৎ বাড়িয়ে ফেললে শরীর মানিয়ে নেওয়ার সময় পায় না। এর জেরে যেমন ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, তেমনই বাড়তে পারে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও। তাই মাস্ক পরাও জরুরি। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘মানব শরীর পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার পার্থক্য সহ্য করতে পারে। এখন
কেউ যদি ৩৪ ডিগ্রি গরম থেকে ঘুরে এসেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২৫ ডিগ্রির ঘরে ঢোকেন, তা হলে আর দেখতে হবে না। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা জল খাওয়ার ক্ষেত্রেও শরীরে তাপমাত্রার পার্থক্য হয়। এই তাপমাত্রার পার্থক্য অ্যালার্জিরও একটি বড় কারণ।’’
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘সর্দি-কাশিতে ভোগা বহু রোগী পাচ্ছি। সর্দি-কাশি হওয়া সব ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণ না-ও হতে পারে। হঠাৎ ঠান্ডা বা হঠাৎ গরমের জেরে শরীরের যে সমস্যা হয়, তার বহিঃপ্রকাশও হতে পারে এই সর্দি-কাশি। তবে কিছুতেই মাস্ক খুলে ঘুরে বেড়ানো যাবে না।’’ তাঁর দাবি, গরমে স্বস্তি পাওয়ার নামে অনেকেই মাস্ক খুলে ঘুরছেন। তার বিপদ মারাত্মক হতে পারে বলে সতর্ক করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা কিন্তু নির্মূল হয়নি। এমনিতেই বাতাসে অনেক ভাইরাস থাকে। হঠাৎ তাপমাত্রার বদলে তাদের রাজত্ব বাড়ে। নাক এবং গলার মাধ্যমে শেষে ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে তারা। ঠান্ডা-গরম থেকে বাঁচতে বাকি সাবধানতার সঙ্গে মুখ এবং নাকের মতো ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার প্রবেশপথ মাস্ক দিয়ে আটকাতে পারলে
অনেকটা কাজ হবে।’’
দুই চিকিৎসকেরই পরামর্শ, গরম থেকে বাঁচতে গায়ের সঙ্গে লেগে থাকে এমন পোশাক পরা এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যবহার বাড়াতে হবে সুতির পোশাকের। গরম লাগার নামে যখন তখন ঠান্ডা পানীয় পান করার প্রবণতাও ছাড়তে হবে। বদলে নুন-চিনির জল পান বাড়াতে হবে। যতটা সম্ভব হাল্কা খাবার খেতে হবে। তেল-মশলার ব্যবহার এই সময়ে যতটা কমানো যায় ততই ভাল। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘জল কম খেলে ত্বক শুকিয়ে যায়। ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে কম জলপানের কারণে। পাচনতন্ত্রের উপরে যাতে চাপ না পড়ে, সেটাও দেখতে হবে। তেল-মশলাযুক্ত খাবারের চেয়ে জোর দিতে হবে বাড়ির তৈরি হাল্কা খাবারের উপরে।’’ সেই সঙ্গে সম্ভব হলে দুপুর ১১টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত বাইরে বেরোনো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বেরোতেই হলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিশ্রাম নিতে হবে।
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই গরমে কী রকম পোশাক পরানো হচ্ছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতটা সম্ভব হাল্কা পোশাক পরান। আর দেখতে হবে করোনার জন্য ছোটদের বাইরে বেরোনো বন্ধ থাকলেও বাড়ি বসেই যেন তারা ফাস্ট ফুডের নাগাল না পায়।’’