গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া সেই বেআইনি বহুতল। —ফাইল ছবি।
শারদোৎসবের আবহেও সাসপেনশন উঠছে না কলকাতা পুরসভার তিন ইঞ্জিনিয়ারের। চলতি বছর মার্চ মাসে এই তিন জনকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছিল। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ওই তিন ইঞ্জিনিয়ারের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তাদের দাবি ছিল, গার্ডেনরিচের ঘটনার পরেও বিল্ডিং বিভাগের অস্থায়ী ডিজিকে স্থায়ী করা হয়েছে। তাই এ বার সাসপেন্ড হওয়া তিন ইঞ্জিনিয়ারের উপর থেকেও সাসপেনশনের খাঁড়া তুলে নেওয়া হোক।
সংগঠনটির আশা ছিল, উৎসবের সময় কলকাতা পুরসভা ওই তিন ইঞ্জিনিয়ারের সাসপেশন প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু সম্প্রতি সংগঠনটি জেনেছে যে, পুরসভা কর্তৃপক্ষ এখনই সেই সাসপেনশন প্রত্যাহার করছে না। কারণ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, গার্ডেনরিচের বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। তা ছাড়া, কলকাতা পুরসভাও ওই ঘটনা নিয়ে যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাচ্ছে, সাসপেনশন তুলে নিলে সেই তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে বলে জনসমক্ষে বার্তা যেতে পারে। তাই এখনই সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই ওই তিন জনের শাস্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ১৭ মার্চ কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। ওই এলাকাটি ১৫ নম্বর বরো এলাকার অন্তর্গত। ঘটনাচক্রে, ওই বিধানসভা কেন্দ্রটি আবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই চাপে পড়ে কলকাতা পুরসভার শীর্ষ প্রশাসন। প্রথম কড়া পদক্ষেপ হিসাবে ওই বরোর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ় করা হয়। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর ছিল, কোন ওয়ার্ডে কত বেআইনি বাড়ি আছে, তা চিহ্নিত করা তাঁদের দায়িত্ব ছিল। সেই কাজে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেননি। তাই প্রথমে শো-কজ় এবং শেষ পর্যন্ত তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করে কলকাতা পুরসভা। গত ২২ মার্চ ঘটনার তদন্ত করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল পুরসভা। মোট আটটি বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কমিটি ছ’টি বিষয়ের তদন্ত রিপোর্ট কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈনের কাছে জমা দেয়। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই ইঞ্জিনিয়ারদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। সাসপেনশনের পর থেকেই ইঞ্জিনিয়ার সংগঠন নিলম্বিত সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু, তাদের আবেদন খারিজ করে আপাতত সাসপেনশন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ, দলীয় কাউন্সিলরকে বাঁচাতেই কলকাতার মেয়র ইঞ্জিনিয়ারদের বলির পাঁঠা করেছেন। এ প্রসঙ্গে জবাব দিতে নারাজ কলকাতা পুরসভার শীর্ষ প্রশাসন।