Bethune Collegiate School

বেথুন স্কুলকে ‘বঙ্গরত্ন’ মুখ্যমন্ত্রীর, জমকালো অনুষ্ঠানেও ঢাকা পড়ল না স্কুলের দুরবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

বুধবার স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্যের হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৭:১৬
Share:

বুধবার, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঐতিহ্যবাহী বেথুন কলেজিয়েট স্কুলকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিলেন বঙ্গরত্ন পুরস্কার। বুধবার স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্যের হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন, কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী স্কুলকে ২ লক্ষ টাকা ও শিক্ষা দফতর থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

Advertisement

তবে এই জাঁকজমকের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে সরকারি স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। এমনকি, যে বেথুন স্কুলকে মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গরত্ন পুরস্কার দিলেন, সেই স্কুলেই এখন নেই প্রধান শিক্ষিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা, প্রাতঃবিভাগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। নেই বেশ কিছু বিষয়ের শিক্ষকও। তাই পুরস্কার পাওয়ার দিনেও জোরালো প্রশ্ন উঠেছে, বেথুন স্কুলের মতো ঐতিহ্যবাহী স্কুলের আগের গৌরব কবে ফিরবে?

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘১৭৫ বছর আগে যে স্কুল শুরু হয়েছিল, সেটা এখন বটবৃক্ষ মহীরুহ হয়ে গিয়েছে। যখন এই স্কুল শুরু হয়েছিল, তখন মহিলা শিক্ষার কথা কেউ ভাবতেই পারেনি। আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন হচ্ছে, এ দিকে বেথুন কলেজিয়েট স্কুল পালন করছে ১৭৫ বছর। তার অর্থ, স্বাধীনতার আগে থেকেই নবজাগরণে বেথুন স্কুলের স্থান ছিল।’’ মমতার কথায়, ‘‘মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপ্তি না হলে সমাজের ভাল হতে পারে না। ১৭৫ বছর আগে এই স্কুল ভাবতে পেরেছিল মেয়েদের শিক্ষার কথা।’’

Advertisement

১৮৪৯ সালের ৭ মে জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল। তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন রামগোপাল ঘোষ এবং মদনমোহন তর্কালঙ্কার। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির বৈঠকখানায় এই স্কুলের সূচনা হয়। স্কুলের প্রথম সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই ক্যালকাটা ফিমেল স্কুলেরই পরে নাম হয় বেথুন কলেজিয়েট স্কুল। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ দিনের অনুষ্ঠানে বর্তমান শিক্ষিকা, পড়ুয়া, প্রাক্তন পড়ুয়া, শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষাকর্মী সবাই উপস্থিত ছিলেন। ১২ লক্ষ টাকার যে অনুদান পাওয়া গেল, তা স্কুলের পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নতির জন্য ব্যয় করা হবে।’’

তবে শুধু এককালীন অনুদানে স্কুলের কতটা লাভ হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকেরাই। ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘শুধু বেথুন স্কুল নয়, হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুল, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের ২০০ বছর হয়েছে। উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের ১৭৫ বছর হয়েছে। এই সব ঐতিহ্যবাহী সরকারি স্কুলগুলি শিক্ষকের অভাবে ভুগছে। এই শূন্য পদের সমস্যাটা মারাত্মক জায়গায় পৌঁছেছে। এগুলি দ্রুত পূরণ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। পুরস্কার দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারি স্কুলে পিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ হয়। সেই নিয়োগ থমকে।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘সরকারি এই স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাবে একাদশ-দ্বাদশের বিজ্ঞান শাখায় পড়ুয়া কমছে। তার সমাধানই বা কী ভাবে হবে? প্রতিটি সরকারি স্কুলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালুর কথা ছিল। তার বাস্তবায়ন কবে হবে?’’

মেলেনি উত্তর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement